কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রাজেশ ওরাংয়ের মা, (ইনসেটে, রাজেশ ওরাং। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিক দু’সপ্তাহ আগে বাড়িতে ফোন করেছিলেন দাদা। ঘড়ি ধরে দু’মিনিট কথা হয়েছিল, স্পষ্ট মনে আছে বোন শকুন্তলার। দাদা বলেছিলেন, ‘‘হাতে মাত্র দু’মিনিট। মা-বাবাকে বলিস, এখন আর ফোন করতে পারব না। আজ থেকে ওপরে ডিউটি আছে। কী হবে জানি না।’’
রাজেশ ওরাংয়ের সেটাই শেষ ফোন তাঁর বাড়িতে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বেলগড়িয়া গ্রামের ওরাং পরিবারের কাছে ফোন আসে। লে-র সামরিক ক্যাম্প থেকে আসা সেই ফোন ‘রিসিভ’ করেন কলেজছাত্রী শকুন্তলাই। ফোনে বলা হয়, চিনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন রাজেশ। বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বেলগড়িয়া গ্রামের বাড়িতে বসে বুধবার শকুন্তলা বলছিলেন, ‘‘দাদা বলেছিল, ওপর থেকে ফিরে আবার ফোন করব। তোরা চিন্তা করিস না। এটাই ছিল দাদার শেষ কথা।’’
২০১৫ সালে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তে পড়তেই ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টে সুযোগ পান রাজেশ। সেই থেকে দুই কাঁধে একসঙ্গে তুলে নিয়েছিলেন দেশরক্ষা ও সংসারের ভার। লাদাখে সীমান্ত রক্ষার কাজ করছিলেন। আবার চাকরি পাওয়ার পরে গ্রামের মাটির বাড়ি ভেঙে তৈরি করেছিলেন একতলা পাকা বাড়ি। বোনকে ভর্তি করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের রানীশ্বর কলেজে। অ্যাপেনডিক্স অস্ত্রোপচারের পর থেকে বাবা কাজ করতে পারতেন না। সংসার চলত রাজেশের রোজগারেই। দিন দশেক পরপর বোনকে ফোন করতেন। বলতেন, ‘‘তোর পড়ার জন্য যা যা দরকার হবে, সব দেব। কিন্তু ভাল ভাবে পড়াশোনা করতেই হবে।’’ বাড়ি আসতেন ছ’মাসে এক বার। শেষ বার এসেছিলেন গত সেপ্টেম্বরে, পুজোর সময়ে। সেই বাড়িতেই এসে পৌঁছবে রাজেশের কফিনবন্দি দেহ!
আরও পড়ুন: গলওয়ানে নিহত রাজ্যের দুই, আর্থিক সাহায্য ও চাকরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আরও পড়ুন: ছক কষে হামলা, চিনা বিদেশমন্ত্রীকে অভিযোগ জয়শঙ্করের
আরও পড়ুন: সংযমে ইতি? নীতি বদলাচ্ছে দিল্লি, সীমান্ত সঙ্ঘাতে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ সেনাকে
বুধবার সকাল থেকেই ভিড় শুরু হয় রাজেশের বাড়িতে। আসেন জেলা পুলিশের কর্তা থেকে নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। রাজেশের মৃত্যু এক দিনের জন্য হলেও রাজনৈতিক বিভেদ মুছে দিয়েছে। গোটা গ্রামে এ দিন ছিল অরন্ধন। কিন্তু গ্রামবাসী এবং রাজেশের পরিজনের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল, বিজেপি নেতারা মিলে। বেলগড়িয়া গ্রামে ঢোকার রাস্তা বর্ষায় বেহাল। রাজেশের মরদেহ আনতে যাতে সমস্যা না-হয়, সে জন্য স্থানীয় ভূতুরা পঞ্চায়েত এ দিন রাস্তা সারায়। হাত লাগান দল নির্বিশেষে গ্রামবাসীরা।
রাজেশের মা মমতা ওরাং জানান, বড় মেয়ের বিয়ের পরে এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটত। রাজেশ চাকরি পেতে অবস্থা বদলায়। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ছুটিতে এলে এই মাসেই বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল রাজেশের। লকডাউনে আসতে পারেনি। সব শেষ হয়ে গেল।’’
(সহ-প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy