তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করে দিলেন প্রশান্ত কিশোর।—ফাইল চিত্র।
গা-জোয়ারি একদম নয়, পঞ্চায়েতের পুনরাবৃত্তি কিন্তু দলের ক্ষতি করে দিতে পারে। পুরভোটের আগে সতর্কবার্তা প্রশান্ত কিশোরের (পিকে)। গোটা কলকাতার তৃণমূল নেতৃত্বকে নিয়ে শুক্রবার বৈঠক করলেন পিকে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই কাউন্সিলর এবং ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতাদের এই কথাই বললেন পিকে। প্রায় একই সুরে অভিষেকেরও বার্তা, গাড়ি-গয়নার বৈভব দেখানো বন্ধ করুন।
চলতি বছরেই পুরভোট কলকাতায়। পুরভোট হওয়ার কথা রাজ্যের আরও শতাধিক পুরসভাতেও। এপ্রিলের আগে সে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা কমই। কিন্তু বছর শুরু হতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল তৃণমূল। ফেব্রুয়ারিতেই যদি ভোট হয়, তা হলেও যেন দল প্রস্তুত থাকে— এই বার্তাও পিকের তরফ থেকে দেওয়া বল কাউন্সিলর ও ব্লক সভাপতিদের।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য জুড়ে এই পুরভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূলের জন্য। লোকসভা ভোটে বিজেপির কাছে যে ধাক্কা তৃণমূল খেয়েছে, তা সামলে নেওয়া গিয়েছে কি না, প্রমাণ হয়ে যাবে পুরভোটের ফলাফলেই। যদিও নভেম্বরে ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দলের জয় দেখিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করতে শুরু করেছেন যে, বিজেপি হাওয়া এখন অতীত। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে বিষয়ে একমত নন। মাত্র ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফল, তা-ও আবার উপনির্বাচন— এতে গোটা রাজ্যের প্রবণতা আঁচ করে নেওয়া উচিত নয় বলে তাঁদের অনেকের মত। সুতরাং ২০২১-এর আগে দলের মনোবল বাড়িয়ে রাখতে পুরভোটে বিজেপি-কে অনেকটা পিছনে যে ফেলতেই হবে, তা তৃণমূলও বুঝতে পারছে। আর বরাবর তৃণমূলের সবচেয়ে মজবুত দুর্গ হিসেবে পরিচিত কলকাতাকে ধরে রাখা যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৃণমূলের জন্য, সে বিষয়েও রাজনৈতিক শিবির একমত। তাই কলকাতার কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদদের নিয়েই আগে বৈঠকে বসলেন পিকে ও অভিষেক। ছিলেন সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং আরও অনেকে।
আরও পড়ুন: কেন বাদ মুসলিম উৎসব? বাম-ব্যাখ্যায় ঝাঁঝ, বাকিরা থমকে
কী আলোচনা হয়েছে বৈঠকে, তা নিয়ে রাজ্যের শাসক দলের নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কিন্তু তৃণমূল সূত্রের খবর— ভোটের দিনে গা-জোয়ারির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন পিকে। এখন থেকে জনসাধারণের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান, সমস্যায় পাশে দাঁড়ান, কোথাও ক্ষোভ থাকলে তার আঁচ সহ্য করুন, কিন্তু ভোটের দিনে বাজিমাৎ করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসুন— মোটের উপরে এ কথাই পিকে বলেছেন বলে জানা গিয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে যে ছবি তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে, তার ফল যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ভুগতে হয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সংশয় কমই। সুতরাং কলকাতার পুরভোটে ওই ছবির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে— এই পরামর্শ খুব স্পষ্ট ভাবেই তৃণমূল নেতাদের পিকে দিয়েছেন বলে খবর। কাউন্সিলরদের উদ্দেশে পিকের বার্তা— নিজের স্বার্থ দেখতে গিয়ে দলের ক্ষতি করবেন না।
আরও পড়ুন: ভাটপাড়া পুরসভা: তৃণমূলের হোঁচট ডিভিশন বেঞ্চেও
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও পিকের পরামর্শকেই অনুমোদন করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের হয়ে ভাল ভাবে কাজ করুন, কোনও সুপারিশের প্রয়োজন হবে না— কাউন্সিলর তথা ব্লক স্তরের নেতাদের এ দিন এই বার্তাই দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে আগের এক বৈঠকেই পিকে বার্তা দিয়েছিলেন যে, জনসাধারণের সামনে নিজেদের বৈভব দেখাতে যাবেন না। দামী গাড়ি, বহুমূল্য গয়না দেখানো বন্ধ করুন— পরামর্শ ছিল তাঁর। এ দিনের বৈঠকে যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সে কথা দলকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে খবর।
তৃণমূল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, এ বারের পুরভোটে কলকাতার অধিকাংশ আসনে প্রার্থী বদলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন পিকে। কিন্তু তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সে সুপারিশ পুরোপুরি মানতে প্রস্তুত নন বলেই জানা যাচ্ছে। যাঁরা ভাল কাজ করেছেন বলে নেতৃত্ব মনে করবে, তাঁদের সকলকেই ফের টিকিট দেওয়া হবে— সিদ্ধান্ত এ রকমই। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন, কাজই মাপকাঠি হবে, কাউকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে টিকিট জোগাড় করা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy