বিজেপি শাসিত গুজরাট-কর্নাটকে এই শপথ-প্রচলন শুরুও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের অবশ্য দাবি, এনএমসি-র প্রস্তাবিত বেশ কিছু নিয়ম, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রচলনের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
প্রতীকী ছবি।
দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল (এনএমসি)-র ‘হিন্দুত্ববাদের’ ছায়া আরোপ করার যে পরিকল্পনা নিয়ে দিন কয়েক আগে উত্তাল হয়েছিল দেশ, সোমবার সেই প্রতিবাদ এড়িয়ে উল্টে কমিশনের প্রস্তাবিত নির্দেশিকাকেই কার্যত সিলমোহর দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার যে ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) অন্তত সে কথাই বলছে।
এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের ক্লাস শুরুর প্রথম দিন প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের প্রচলিত ‘হিপোক্রেটিক ওথ’-এর পরিবর্তে বিতর্কিত ‘চরক শপথ’ পাঠ করিয়েই ক্লাস শুরু হয় বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সাফাই, কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই ওই শপথ পাঠ করানো হয়েছে। যা শুনে, রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘চরক শপথ পাঠ করানোর ঘটনাটি শুনলাম। এমনটা যে হবে, আমাকে কেউ কিছুই জানাননি। এর বেশি আর কী বলব!’’
আচমকা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেন এমন হল, তা নিয়ে চিকিৎসক ও ছাত্র সংগঠনগুলি সরব হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘সাদা কোট পরে এনএমসি-র গাইডলাইন মেনেই চরকের নামে শপথ নেওয়া হয়েছে।’’ এ দিন এর প্রতিবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র সংগঠন ডিএসও। গত ৭ ফেব্রুয়ারি এনএমসি-র সর্বভারতীয় বৈঠকে এমবিবিএসের পাঠ্যক্রমের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসক পেশার শুরুতে কনভোকেশনে বিশ্ব জুড়ে হিপোক্রেটিক শপথ নিতেন চিকিৎসকেরা। ৭ ফেব্রুয়ারি আচমকা সেটি বদলের জন্য এনএমসি-র উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধিতা করে সমস্ত সংগঠন। গৈরিকীকরণের অভিযোগ ওঠে। আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন এ দিন বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে এনএমসি-র চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওঁরা জানিয়েছিলেন বিষয়টি ঐচ্ছিক থাকবে। তার পরে কী ভাবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এটা হল তা
জানি না।’’
ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র মেডিক্যাল ইউনিটের তরফে সামস মুশাফির বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত শপথবাক্যকে বাদ দিয়ে ভারতীয় ঐতিহ্যের নামে যেটা করা হচ্ছে, তা প্রতিহত করার ডাক দিচ্ছি।’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “চরক শপথ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার শপথ হিসেবে চলে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে তা খাপ
খায় না।’’
রাজ্যের মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক চিকিৎসক অংশুমান মিত্র বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই চরক শপথ-এর বিষয়টি প্রস্তাব আকারে এনেছিল। দেশ জুড়ে যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এ আসলে মেডিক্যাল শিক্ষায় গৈরিকীকরণের নামান্তর।’’
বিজেপি শাসিত গুজরাট-কর্নাটকে এই শপথ-প্রচলন শুরুও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের অবশ্য দাবি, এনএমসি-র প্রস্তাবিত বেশ কিছু নিয়ম, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রচলনের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের দাবি, কমিশনের প্রস্তাব মেনে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই পিপিপি মডেল অনুসরণ করে মেডিকেল কলেজ চালুর চেষ্টা শুরু করেছে। চরক শপথ তারই অঙ্গ বলে দাবি করেছে সেন্টার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy