Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Sealdah Main Section

শিয়ালদহ মেন লাইনে যাত্রীদের টানা দুর্ভোগ শেষ হবে কবে? কী বলছে রেল?

ট্রেন যে ভাবে শিয়ালদহ পৌঁছতে দেরি করছে, তা দেখে নিত্যযাত্রীদের একাংশ ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’-এর কথা মনে করছেন। কারণ, ডাউনে পালপাড়া, মদনপুর পার হওয়ার পরেই ট্রেনের গতি কমে যাচ্ছে। বিলম্ব ঘটছে।

In Sealdah Main Section train messes for a long time, passengers suffering, what Rail is saying about the situation

গত কিছু দিন ধরে বাড়াবাড়ি রকমের ভোগান্তি হচ্ছে শিয়ালদহ-রানাঘাট শেষ লোকালের যাত্রীদের। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৩ ১৮:৫৩
Share: Save:

এখনও ঠিক হল না শিয়ালদহ মেন লাইনের ট্রেন পরিষেবা। প্রায় ছ’মাস হয়ে গেল, প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও সংস্কারের কাজের জন্য বাতিল করা হচ্ছে ট্রেন। কখনও নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগেই শেষ করানো হচ্ছে যাত্রাপথ। শুধু তাই নয়, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে ট্রেন চলেছে অস্বাভাবিক দেরিতে। তার মধ্যেই পূর্ব রেল জানিয়েছে, শনি ও রবিবার ইছাপুরে সেতু সংস্কারের জন্য বাতিল থাকবে একগুচ্ছ ট্রেন।

নৈহাটি-কল্যাণীর মধ্যে তৃতীয় লাইনের কাজের জন্য সম্প্রতি চূড়ান্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। হচ্ছেও। কোনও কোনও ট্রেন চার-পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত লেট। রেল যদিও বলছে, পরিষেবার মানে উন্নতি করতে গিয়ে এ সব কাজ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কাজ শেষ হলেই ফের স্বাভাবিক হবে পরিষেবা। এবং তা হবে আগের থেকে উন্নত মানের। কিন্তু সেটা কবে? এ ভাবে আর কত দিন? প্রশ্ন বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, দোলের সময় থেকেই টানা চলছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে ব্যাহত হচ্ছে শিয়ালদহ মেন সেকশনের ডাউন ট্রেন পরিষেবা। গেদে, কৃষ্ণনগর বা শান্তিপুর থেকে অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়ছে। কিন্তু সেই ট্রেন যে ভাবে শিয়ালদহ পৌঁছতে দেরি করছে, তা দেখে নিত্যযাত্রীদের একাংশ ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’-এর কথা মনে করছেন। কারণ, ডাউনে পালপাড়া, মদনপুর পার হওয়ার পরেই ট্রেনের গতি কমে যাচ্ছে। বিলম্ব ঘটছে। আবার নৈহাটি এসে পৌঁছনোর পরে ট্রেন মোটামুটি স্বাভাবিক গতিতে ফিরছে। মাঝের অংশটুকুতেই ঘটে যাচ্ছে ‘বিপর্যয়’। একই ভাবে আপ লাইনেও নৈহাটি পর্যন্ত মসৃণ ভাবে পৌঁছনোর পরেই শুরু হচ্ছে ৫০, ৬০ বা কখনও কখনও ১২০ মিনিট দেরির ‘গল্প’। ডাউন ট্রেন দেরিতে আসার ফলে শিয়ালদহ থেকে আপ ট্রেনও ছাড়ছে দেরি করে। দিন যত গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

In Sealdah Main Section train messes for a long time, passengers suffering, what Rail is saying about the situation

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে, দোলের সময় থেকেই টানা চলছে দুর্ভোগ। ছবি: সংগৃহীত।

শিয়ালদহের কাছে একটি কলেজে পড়ান সোদপুরের সুইটি সেন। প্রতি দিন সকালে তিনি রানাঘাট লেডিস স্পেশাল ধরেন। গত বেশ কিছু দিন সেই ট্রেন বাতিল ছিল। ফলে ৯টা ১৪ মিনিটের ব্যারাকপুর লোকাল ধরছিলেন। কিন্তু সেই ট্রেনে মারাত্মক ভিড়ের ঠেলায় একাধিক দিন উঠতে পারেননি। পিছনে থাকা কৃষ্ণনগর, গেদে বা রানাঘাট লোকাল অস্বাভাবিক দেরিতে চলায় সুইটি গত ১৫ দিনে একাধিক দিন দেরিতে কলেজে ঢুকেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কলেজে দেরিতে পৌঁছেও তো শান্তি নেই। ফেরার পথে আবারও বিড়ম্বনা। শিয়ালদহে কোনও ট্রেন থাকে না আজকাল। এক একটা ট্রেন বীভৎস দেরিতে ছাড়ছে। মাঝে কয়েক দিন বারাসত মাতৃভূমি লোকাল ধরে মধ্যমগ্রাম নেমে অটোতে সোদপুর পৌঁছেছি। এই দুর্ভোগ আর সহ্য হচ্ছে না।’’

খড়দহের বাসিন্দা অমিতাভ রায়ের অফিস সল্টলেকে। তিনি রোজ সকাল সাড়ে ৮টার রানাঘাট লোকাল ধরেন। এই ট্রেনটি গত প্রায় ১৫ দিন ধরে বাতিল ছিল। ফলে তাঁকে রোজ খড়দহ স্টেশনে ১ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কখনও কখনও এত দেরি হয়েছে যে, তিনি অটোতে বিটি রোড ধরে বরাহনগর পৌঁছে মেট্রো ধরেছেন। তাতে রোজই অফিসে দেরিতে পৌঁছেছেন। শনি-রবি আবারও ট্রেন বন্ধ শুনে বলছেন, ‘‘আর ভাল লাগছে না। কোথাও তো একটা শেষ হতে হবে।’’

এর মধ্যেই গত কিছু দিন ধরে বাড়াবাড়ি রকমের ভোগান্তি হচ্ছে শিয়ালদহ-রানাঘাট শেষ লোকালের যাত্রীদের। পূর্ব রেলের এখনকার ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট রেকের মেনু শেষ রানাঘাট লোকাল হিসাবে বরাদ্দ। সন্ধ্যায় লালগোলা থেকে ছেড়ে ওই মেমু ডাউনে শিয়ালদহে আসে। সেই রেকই আবার শেষ রানাঘাট লোকাল হয়ে ফেরে। গত কিছু দিন ‘বারমুডা ট্রায়ঙ্গল’-এর চক্করে পড়ে ডাউন লালগোলার পৌঁছতে অস্বাভাবিক দেরি হচ্ছে শিয়ালদহে। ততোধিক দেরিতে ছাড়ছে শেষ ট্রেন। যাত্রীদের এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে, শেষ ট্রেনের যে সময় রানাঘাট পৌঁছে যাওয়ার কথা, প্রায় সেই সময় শেষ ট্রেন ছেড়েছে শিয়ালদহ থেকে।

মধ্য কলকাতায় একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন রবীন দত্ত। শ্যামনগরের বাসিন্দা। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে কর্মক্ষেত্র থেকে তিনি গভীর রাতে ফেরেন। শিয়ালদহ থেকে ধরেন শেষ ট্রেন। কিন্তু গত প্রায় ১৫ দিন সেই শেষ ট্রেন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে কখনও রাত ১টা, কখনও দেড়টায়। তার পরও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছে দমদম, খড়দহ, ব্যারাকপুরের মতো স্টেশনে। রবীনের কথায়, ‘‘অত রাতে ফিরে আবার পর দিন কাজে যাওয়া, সে যে কী বিরক্তির! কবে যে রেলের এই কাজ শেষ হবে! শুনছিলাম তো করোনা-কালে রেল ব্যাপক কাজ করেছে। এই তার নমুনা!’’

শিয়ালদহ মেন সেকশনের এই ভোগান্তি নিয়ে রেলের দাবি, সব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘স্বাভাবিক এবং মসৃণ ভাবে ট্রেন পরিষেবা চালাতে সংস্কারের কাজ করা প্রয়োজন। এবং জরুরিও বটে। যে সমস্ত কাজ পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছে। পরিষেবা এখন স্বাভাবিক। আর যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে অনেক আগে থেকেই আমরা জানিয়ে রাখি, কবে কোথায় কী ধরনের কাজ হবে। কী কী পরিষেবা ব্যাহত হবে। সেই মতো কাজ হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sealdah Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy