নতুন মোবাইল হাতে ছলিমুদ্দিন শেখ। নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বিহারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর ষাটের ছলিমুদ্দিন শেখ পেশায় দিনমজুর। পরিবারের কারও মোবাইল ফোন নেই। পরিবারের পাঁচ সদস্যের খাদ্য সুরক্ষা কার্ড রয়েছে। চার জনের আধার কার্ড তৈরি হলেও তাঁর পাঁচ বছরের এক নাতনির আধার কার্ড তৈরি হয়নি। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর ও মোবাইল নম্বর যুক্ত করা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আধার কার্ড ও মোবাইল ফোন না থাকায় চলতি মাসে নাতনির কার্ডে বরাদ্দ রেশন সামগ্রী পাননি ছলিমুদ্দিন। ফলে দেড় হাজার টাকায় সিম কার্ড সহ মোবাইল ফোন কিনে হরিহরপাড়া বিডিও অফিসে মোবাইল নম্বর সংযোগ করতে হাজির ছলিমুদ্দিন। নতুন মোবাইল ফোন আর খাদ্য সুরক্ষা কার্ড হাতে নিয়ে বিডিও অফিস চত্বরে দাঁড়িয়ে ছলিমুদ্দিন বলেন, ‘‘নতুন ভাবে আধার কার্ড তৈরি করা যাচ্ছে না। বাড়িতে মোবাইল ফোনও ছিল না। ফলে একটি কার্ডের রেশন পাইনি। নাতনির রেশন পেতেই ধারদেনা করে মোবাইল ফোন কিনতে হল। মোবাইল ফোন চালাতে পারব কি-না জানি না। তবে নাতনির রেশন তো পাব।’’ তাঁর মতো অনেকেই রেশন পেতে মোবাইল ফোন কিনছেন।
সম্প্রতি রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে রেশন সামগ্রী নেওয়ার সময় আঙুলের ছাপ অথবা মোবাইল নম্বরের ওটিপি পাওয়াটা বাধ্যতামূলক করে খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। অনেক উপভোক্তার ডিজিটাল রেশন কার্ড থাকলেও আধার কার্ড তৈরি হয়নি। কারও আবার আঙুলের ছাপ মিলছে না। রেশন ডিলাররা বলছেন, রেশন সামগ্রী পেতে আঙুলের ছাপ না মিললেও মোবাইলে ওটিপি পেলেই চলবে। কিন্তু বাধ সেধেছে তাতেই। গ্রামীণ এলাকায় অধিকাংশ পরিবারে মোবাইল ফোন নেই বা মোবাইল ফোনের ব্যবহার জানেন না। স্বভাবতই রেশন সামগ্রী পাচ্ছেন না এ রকম অনেক উপভোক্তা। হরিহরপাড়ার এক রেশন ডিলার তথা এমআর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের ব্লক সম্পাদক বাবর আলি খান বলছেন, ‘‘অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না। নেই মোবাইল ফোনও। ফলে দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী ওই ধরনের গ্রাহকদের ডিলাররা তাঁদের রেশন সামগ্রী দিতে পারছেন না।’’
এই সমস্যায় আতান্তরে পড়েছেন এলাকার বহু পরিবার। যেমন, হরিহরপাড়ার রুকুনপুর এলাকার বাসিন্দা লেখাচন বেওয়া ও আঙ্গুরা বেওয়া। আঙ্গুরা বেওয়া ভিক্ষাজীবী। ভিক্ষাবৃত্তির চাল, টাকা আর রেশন দোকান থেকে পাওয়া সামগ্রী দিয়েই চলে তাঁদের সংসার। তাঁদের মোবাইল ফোন নেই। ফলে খাদ্যসুরক্ষা কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যুক্ত করার প্রশ্নই নেই। চলতি সপ্তাহে রেশন নিতে এসে দেখা যায়, তাঁদের আঙুলের ছাপ মিলছে না। ফলে রেশন সামগ্রী পাননি তাঁরা। আঙ্গুরা বলেন, ‘‘রেশন চাল, আটাতেই আমাদের দিন চলে। হাতের আঙুলের ছাপ মেলেনি। মোবাইল ফোন নেই, আমরা মোবাইল চালাতেও পারব না। রেশনের চাল, আটা পেলাম না। আমরা খাব কী?’’ স্থানীয় রেশন ডিলার সমসের আলি বিশ্বাস বলেন, ‘‘এলাকার বহু মানুষের এই সমস্যা রয়েছে। আমরা দফতরের নির্দেশকে উপেক্ষা তাঁদের রেশন সামগ্রী দিতেও পারছি না। মানুষ হয়রান হচ্ছেন। বিষয়টি দফতরকে জানিয়েছি।’’
রেশন সামগ্রী না পেয়ে মঙ্গলবার হরিহরপাড়া বিডিও অফিসে এসেছিলেন সাহাজাদপুর গ্রামের বাসিন্দা মরিয়ম বেওয়া। তিনি বলেন, ‘‘মোবাইল ফোন নেই। তাই আধার কার্ডের নম্বরটা যোগ করতে এসেছি। একা মানুষ। রেশনের চাল, আটা না পেলে খাব কী?’’ মুর্শিদাবাদ জেলা খাদ্য নিয়ামক সুদীপ্ত সামন্ত বলেন, ‘‘অনেকের মোবাইল ফোন নেই, অনেকে আবার মোবাইল নম্বর পাল্টেছেন। ফলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে খাদ্য সুরক্ষা কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করার উপরে দফতর বেশি জোর দিয়েছে।’’ প্রতিটি ব্লকের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরে, বাংলা সহায়তা কেন্দ্রে ও রেশন ডিলারদের কাছেও আধার সংযুক্তির কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy