বিক্ষোভ-প্রতিবাদের সঙ্গে এ বার মুচলেকা লেখানো শুরু হল ‘কাটমানি’-কাণ্ডে। পড়ল রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পোস্টারও।
বীরভূমের সাঁইথিয়ায় গ্রামবাসীর চাপে ‘কাটমানি’র টাকা ফেরতের মুচলেকা দিতে হয়েছে তৃণমূলের ভ্রমরকোল পঞ্চায়েতের সদস্য মিলন দেবাংশীকে। বুধবার বেলিয়া গ্রামে ওই পঞ্চায়েত সদস্য এবং তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর একাংশের বচসা, ধস্তাধস্তি হয়। মিলনবাবুর দাবি, ‘‘কাটমানি নয়, এলাকার গরিবদের স্বার্থে কারও কারও কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। সেই টাকায় গ্রামে আলো লাগানো, গরিব মানুষের মেয়ের বিয়ে, দুঃস্থ পরিবারের মৃতদেহ সৎকারে সাহায্য করা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘গ্রামবাসী চাপ দিচ্ছেন। দেড় মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেব বলে মুচলেকা দিয়েছি।’’ পুরুলিয়ার মানবাজারে আবার রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু, তাঁর স্বামী তথা জেলা পরিষদ সদস্য গুরুপদ টুডু এবং তাঁদের ‘ঘনিষ্ঠ’ তৃণমূল নেতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে পোস্টার পড়েছে। পোস্টারে লেখা, ‘ওঁদের চাপ দিয়ে টাকা ফেরত নিন।...’ পোস্টারের নীচে মন্ত্রীরই ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার নাম উল্লেখ রয়েছে। যদিও ওই নেতা পোস্টারের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত থাকার কথা মানেননি। মন্ত্রী মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর স্বামীর দাবি, ‘‘আমাদের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটাতে এটা বিরোধীদের কাজ। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করব।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে আবার তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলরদের একাংশ ‘সবার জন্য ঘর’ প্রকল্পে ‘কাটমানি’ নিয়েছেন অভিযোগে পোস্টার দিয়েছে বিজেপি। অভিযোগ মানেনি শাসক দল।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতে এ দিন পঞ্চায়েতের নানা কাজকর্মের সমালোচনায় বিজেপির বিক্ষোভ-কর্মসূচি চলছিল। আচমকা স্থানীয় এক জন সেখানে হাজির হয়ে তৃণমূলের এক নেতার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি করে দেওয়ার নামে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে পঞ্চায়েতে যাওয়ার সাহস হত না। বিজেপিকে দেখে ভরসা করে এসেছি।’’ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের তসমিনা তসমিনা খাতুন বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা হবে।’’
‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে স্যামুয়েল টুডু নামে তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে এ দিন ঘণ্টা কয়েক বিক্ষোভ দেখান জনা ষাট আদিবাসী। তাঁদের অভিযোগ, গত বছর দুঃস্থ ও সংখ্যালঘু মহিলাদের আবাস প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা ঢুকতেই ইন্দ্রপ্রস্থ-সাহাপাড়ার বাসিন্দা স্যামুয়েল ভয় দেখিয়ে কারও কাছ থেকে ২০ হাজার, কারও থেকে ৩০ হাজার টাকা ‘হাতিয়ে’ নেন। বহরমপুর থানায় অভিযোগও করেন আদিবাসীরা। পুলিশ তদন্ত করছে। স্যামুয়েল বাড়ি ছিলেন না। তাঁকে ফোনেও পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী রিনা মাড্ডি বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার রাতে ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুরে তৃণমুল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের এক নেতার বাড়ি এবং এ দিন দুপুরে মালদহের ইংরেজবাজারের গোকুলনগর-কামাত গ্রামে দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। তৃণমূল কোনও অভিযোগই মানেনি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ মঙ্গলবার থেকে একটি ‘অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র’ চালু করেছে। জেলা সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের বিষয়ে আর্থিক-সহ যে কোনও ধরনের অভিযোগ এখানে জানানো যেতে পারে। তদন্ত করে সেই অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy