গ্রাফিক: শান্তনু ঘোষ
সিবিআই নয়, রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমারকে অবিলম্বে হেফাজতে নিয়ে জেরার পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন খোদ বিচারক। শনিবার আলিপুর জেলা আদালতের সেশনস বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। বিচারকের রায়ে উল্লেখ করা ওই অভিমত রাজীব কুমারের আইনি লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে অনেকটাই প্রতিকূল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
রাজীবের আবেদন খারিজ করে গত ২১ সেপ্টেম্বর ১৬ পাতার যে রায় তিনি দিয়েছেন, তার শেষ অনুচ্ছেদে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমার পরিষ্কার মত, অবিলম্বে অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হোক। যে হেতু এটি একটি অর্থনৈতিক অপরাধ, সে ক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে তাকে হেফাজতে নেওয়া দরকার।” তিনি এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম বনাম ডিরেক্টর অব এনফোর্সমেন্ট-এর মামলায় শীর্ষ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করেন। বিচারক তাঁর রায়ে ১৯৯৮ সালে শীর্ষ আদালতের অন্য একটি মামলার রায়ের কথাও লেখেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘অর্থনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আগাম জামিন পেতে পারেন না।”
রায়ের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বিচারক সুজয় সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘‘তদন্তের কেস ডায়েরি থেকে পাওয়া তথ্য দেখে এবং দু’পক্ষের সওয়াল শুনে, আমার মত, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৯ (সরকারি পদে থেকে প্রতারণা) এবং ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)-এর সপক্ষে জোরালো তথ্যপ্রমাণ আছে।” বিচারক লিখেছেন, ‘‘অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।’’ রায়ের এই পর্যায়ে আরও জোরালো ভাবে বিচারক সমালোচনা করেছেন রাজীব কুমারের। বিচারক সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘‘কেস ডায়েরিতে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ স্পষ্ট করেছে যে, অভিযুক্ত নিজের পদমর্যাদা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হেনস্থা করেছেন, তাঁদের নিগ্রহ করেছেন। যেখানে তাঁরা তদন্ত করছেন শীর্ষ আদালতের নির্দেশে।” এখানেই থেমে থাকেননি বিচারক। পরের লাইনেই তিনি তাঁর অভিমতে জানিয়েছেন, ‘‘তদন্তকারীরা জোরালো প্রমাণ দিয়েছেন, যা থেকে বোঝা যায় যে অভিযুক্ত এক জন পুলিশ আধিকারিক হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো বেশ কিছু বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলেছেন। এবং তা করা হয়েছে কিছু ব্যক্তিকে আড়াল করতেই।” বিচারক বলেছেন, ‘‘অভিযুক্ত (রাজীব কুমার) কখনও তদন্তাকারী সংস্থাকে তদন্তে সহায়তাও করেননি।’’
আরও পড়ুন: জেএমবি-র হাতে রয়েছে রকেট, কওসর ধরা পড়ার ১ বছর পর জানতে পারল এনআইএ!
বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেছেন, সিবিআই তাঁদের সওয়ালে যে তথ্য দিয়েছে তাতে স্পষ্ট ২০১৭-র অক্টোবর থেকে ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা রাজীব কুমারকে মোট আট বার সমন পাঠিয়েছে সারদা রিয়েলটি মামলায়। তার মধ্যে ছ’বারই তিনি সমন উপেক্ষা করেছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী পার্থ ঘোষ এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিচারকের এই কড়া অবস্থান রাজীব কুমারের পক্ষে ভবিষ্যতের আইনি লড়াইয়ে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, জেলা আদালতের রায়ে শীর্ষ আদালতের নির্দেশই প্রতিফলিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার রাস্তা অনেকটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে গেল ওই পুলিশ কর্তার। জেলা আদালতের রায় ঠিক না ভুল, এই ক্ষেত্রে তা বিচার করতে বা সংশোধন করতে পারে একমাত্র শীর্ষ আদালত।”
যদিও পার্থবাবুর মত মানতে রাজি নন রাজীব কুমারের অন্যতম আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী। তিনি দাবি করেন, বিচারক চিদম্বরমের যে মামলার কথা উল্লেখ করেছেন, তার সঙ্গে রাজীব কুমারের মামলার কোনও মিল নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আশা করব ওই রায়ের প্রভাব পড়বে না হাইকোর্টে। আদালত নতুন আবেদন নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখবে।” তবে সম্প্রতি রাজীব কুমারের মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকা হাইকোর্টের অন্য এক আইনজীবী বলেন, ‘‘জেলা আদালতের কড়া মনোভাবের প্রভাব পড়বে হাইকোর্টেও। সে ক্ষেত্রে জেলা জজের মূল্যায়ণ অনেকটাই গুরুত্ব পাবে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতিদের কাছে।’’
আরও পড়ুন: তেলই পুড়ছে সিবিআইয়ের, সাঁতরাগাছি থেকে মেচেদা ঘুরে রাজীব সেই অধরা
জেলা আদালতের রায় যে রাজীবকে সমস্যায় ফেলতে পারে তার সামান্য ইঙ্গিত মঙ্গলবার পাওয়া যায় হাইকোর্টে। আইনজীবী দেবাশিস রায় মঙ্গলবার রাজীবের আগাম জামিনের আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানান বিচারপতি সহিদুল মুন্সি এবং শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে। দেবাশিস আদালতে বলেন, ‘‘সিবিআই হন্যে হয়ে আমার মক্কেল রাজীব কুমারের খোঁজ চালাচ্ছে। মামলাটি যেন দ্রুত শোনা হয়।” তখন বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কেন দ্রুত শুনানির কথা বলছেন? তা হলে রাজীব কুমারকে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলুন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy