Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
নেই যাচাইয়ের পরিকাঠামো
Crackers

‘সবুজ বাজি’তে বিভ্রান্তি, গোপনে মিলছে শব্দবাজি

রাজ্যে বাজির আঁতুড়ঘর মূলত দক্ষিণবঙ্গ। দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও হুগলি, দুই মেদিনীপুরের একাধিক গ্রামে বাজি প্রায় কুটিরশিল্প। দুই বর্ধমানে বাজি তেমন তৈরি হয় না।

গোপনে মিলছে শব্দবাজি।

গোপনে মিলছে শব্দবাজি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১০
Share: Save:

পরিবেশ বান্ধব ‘সবুজ বাজি’র বাইরে আর কিচ্ছু ফাটানো যাবে না, বিক্রিও করা যাবে না বলে এ বার কড়া নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু কালীপুজোর ২৪ ঘণ্টা আগেও সবুজ বাজি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা, এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের ধন্দও কাটল না। কারও জিজ্ঞাসা, ‘‘সবুজ বাজি থেকে কি সবুজ আলো বেরোয়?’’ কারও বিশ্বাস, জোরদার শব্দ না হলেই সেটা সবুজ বাজি।

তবে জেলায় জেলায় বাজি অভিযান চলছে। ধরপাকড়, নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারও হচ্ছে। আর সে সবই মূলত শব্দবাজি। রবিবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে শব্দবাজি ফেটেছে নানা জায়গায়। জানান দিয়েছে, মজুত রয়েছে ভালই।

রাজ্যে বাজির আঁতুড়ঘর মূলত দক্ষিণবঙ্গ। দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও হুগলি, দুই মেদিনীপুরের একাধিক গ্রামে বাজি প্রায় কুটিরশিল্প। দুই বর্ধমানে বাজি তেমন তৈরি হয় না। তামিলনাড়ুর শিবকাশী, ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, কলকাতা লাগোয়া বেগমপুর থেকে মূলত বাজি আসে পশ্চিম বর্ধমানে। আর পূর্ব বর্ধমানে বাজি পৌঁছয় চম্পাহাটি, বারুইপুর থেকে। উত্তরের বিভিন্ন জেলাতেও এ বছর বাজির জোগান দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গই। কিছু বাজি বিহার থেকেও এসেছে।

গত কয়েক দিনে লাগাতার অভিযানও চলেছে জেলায় জেলায়। নিষিদ্ধ বাজি মজুতের অভিযোগে উত্তরবঙ্গের ৮ জেলায় প্রায় ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। রবিবারও কোচবিহারের তুফানগঞ্জ থেকে ১৫ হাজার প্যাকেট শব্দবাজি উদ্ধার হয়। পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতায় বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুর পরে দুই মেদিনীপুরেও লাগাতার অভিযান হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমানে এক মাসে ৫৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ৩৪৪৮ প্যাকেট বেআইনি বাজি। পূর্ব বর্ধমানে ২৬ জনকে গ্রেফতার করে প্রায় ৫৯০ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

তল্লাশিতে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর, গোবরডাঙা, বাগদা, হাবড়া, অশোকনগর, গাইঘাটা থেকেও প্রচুর শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা সদর বহরমপুরে তো ধরপাকড়ে বাজির দোকান কমেছে। কান্দি শহরেও বছর তিনেক আগে যেখানে ১৫টি বাজির দোকান চলত, এ বার তা কমে তিনে ঠেকেছে। এই কড়াকড়িতে প্রকাশ্যে শব্দবাজি না বিকোলেও গোপনে দিব্যি মিলছে দোদোমা, কালীপটকা, চকলেট বোম।

তবে গোটা বঙ্গই সবুজ বাজিতে বিভ্রান্ত। দোকানে ‘সবুজ বাজি’ ছাপ দেওয়া যে বাজি মিলছে, তা আদৌও পরিবেশ বান্ধব কি না, তা যাচাইয়ের পরিকাঠামো কোনও জেলায় নেই। জলপাইগুড়ির পোস্ট অফিস মোড়ের ব্যবসায়ী রাজু দে-র প্রশ্ন, ‘‘সবুজ বাজি জ্বালালে কি সবুজ আলো বেরোয়?’’ মেদিনীপুর শহরে বাজি কিনতে আসা একদল যুবকের বক্তব্য, ‘‘শুনেছি, যে বাজিতে জোরালো শব্দ হয় না, সেটাই সবুজ বাজি!’’ চণ্ডীতলার কালীপুরের বাজি বিক্রেতা শেখ ফিরোজ মানলেন, ‘‘সবুজ বাজি কোনগুলো, জানি না। কোথায় পাওয়া যায়, তা-ও জানি না।’’ বীরভূমের মহম্মদবাজারের ব্যবসায়ী বাপি সরকার আবার জানালেন, ‘‘সবুজ বাজির জটিলতায় এ বার আর বাজিই বিক্রি করছি না।’’

বিভিন্ন জেলায় প্রশাসন বাজি বিক্রেতাদের জানিয়েছে, ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ পোড়ালে ধোঁয়া বেশি হয় না, অন্য দিকে শব্দের মাত্রাও তুলনায় কম থাকে। তবে এ নিয়ে প্রচার হয়েছে নামমাত্র। হাওড়া গ্রামীণে যেমন দেখাই মেলেনি সবুজ বাজির। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানালেন, যে হেতু বাজারে সবুজ বাজি আসেনি, তাই আতশবাজি বিক্রি বন্ধে কড়াকড়ি করা হচ্ছে না।

বর্ধমানে অবশ্য প্রশাসনের তরফে সবুজ বাজির প্যাকেটে নির্দিষ্ট ‘কিউআর কোড’ রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা স্ক্যানও করা হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম বলেন, “আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে নিয়মিত অভিযান চালিয়েছি। সবুজ বাজি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারও চালানো হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crackers Illegal Cracker Green Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy