উদ্বেগ বাড়ছে দার্জিলিং পাহাড়কে ঘিরেও। ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের পরিস্থিতি দেখে এ বার উদ্বেগ বাড়ছে দার্জিলিং পাহাড়কে ঘিরেও।
জোশীমঠে রোজ মাটি ধসে, বসে যাচ্ছে, ফাটল দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। এই দৃশ্য নতুন করে আশঙ্কা ধরিয়ে দিয়েছে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে। নদী-পাহাড়ে ঘেরা জোশীমঠের অবস্থা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণই কি সেখানে এত বড় বিপর্যয়ের কারণ? একই প্রশ্ন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং বা সিকিমের ক্ষেত্রেও উঠতে শুরু করছে। এই এলাকাটি ধসপ্রবণ এবং ভূমিকম্পপ্রবণও। স্থানীয়দের বক্তব্য, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন, সকলেই সে কথা জানে। তার পরেও কি বিপর্যয় রুখতে বড় কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে?
সম্প্রতি দার্জিলিং শহর এলাকায় ১৩২টি অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযান পুরসভার পালাবদলের জেরে থমকে গিয়েছে। সরকারি ভাবে বোর্ড গঠন হলেও আবার কবে কাজ শুরু হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পাহাড়বাসীর মনে। পুরবোর্ডে সদ্য ক্ষমতা হারানো অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির অভিযোগ, বহুতল-কংক্রিটের জঙ্গলে হাত দেওয়াতেই বোর্ড হারাতে হয়েছে দলকে। বিভিন্ন পক্ষ মিলে ষড়যন্ত্র করেছে বলে অজয় নিজেও অভিযোগ করেছেন। যদিও দার্জিলিং পুরসভার সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান রীতেশ পোর্টেল এ নিয়ে কিছু বলতেই চাননি।
তবে জিটিএ চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপা বলেন, ‘‘পাহাড়ের বেআইনি নির্মাণ, বহুতল, উদ্বেগের কারণ। এই বিপদকে মাথায় রেখেই কাজ হবে। আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য যা জরুরি তা করা হবে।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং পাহাড় ভূমিগত ভাবে এখনও গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এই অঞ্চল অসংখ্য খণ্ডিত শিলার উপর দাঁড়িয়ে, যার ধারণক্ষমতা এমনিতেই কম। তা ছাড়া, সেই শিলার সঙ্গে সংযুক্ত মাটি একেবারেই ভঙ্গুর। তাই পর্যটন বা বাণিজ্যিক কারণে পাহাড়ে নির্মাণ করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা
জরুরি। অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত বাড়তি চাপ পাহাড়ের শিলা এবং মাটির ভিতরে থাকা জলের চুঁইয়ে পড়া ধারাকেও বদলে দেয়, যা যে-কোনও নির্মাণকে আরও ভঙ্গুর করে তোলে। এর ফলে যে কোনও সময় জোশীমঠের মতো ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধসের ঘটনা সেই আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পার্থ বিশ্বাস বলেন, ‘‘একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শে এবং যৌথ উদ্যোগে পাহাড়ে নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থাকা প্রয়োজন।’’
সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের পুর আইন অনুসারে দার্জিলিং শহরে ১১.৫ মিটার উচ্চতার মধ্যে বাড়ি তৈরি করাই নিয়ম। কালিম্পং, মিরিক বা কার্শিয়াঙেও সেটাই মেনে চলার কথা। শুধু বিশেষ অনুমতিক্রমে পুরসভা এবং সরকারি কয়েকটি ভবন ১৩ মিটারের ধারেকাছে রয়েছে। অভিযোগ, গত তিন দশক ধরে দার্জিলিং-সহ পাহাড়ের শহরগুলিতে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ ও বহুতল তৈরি হয়েছে। শুধু উচ্চতা নয়, বাড়ির নকশাও পুরসভা থেকে অনুমোদন না করিয়ে বহু কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ।
পাহাড়ের ঢাল কেটে বহুতল তৈরি করা হয়েছে। নিকাশি, পার্কিং ঠিক করা হয়নি। একটি ভবনের গায়ে আর একটি ভবন তৈরি হয়েছে। শুধু বাজার, দোকান, হোটেল, রেস্তরাঁ বা অফিস এলাকা নয়, ব্যক্তিগত বাড়ির ক্ষেত্রেও বেনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ। পাহাড়ের ঢালে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ানক বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy