দুর্যোগের মধ্যে বিসর্জন বাজা কদমতলা ঘাটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বিজয়া দশমীতে সিঁদুরখেলা চলবে বলে জানালেও টিকার জোড়া ডোজ-সহ অতিমারির স্বাস্থ্যবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার শর্ত দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। কিন্তু শুক্রবার কলকাতা থেকে জেলা সর্বত্র দেখা গেল, কোভিড বিধি ও হাই কোর্টের নির্দেশের তোয়াক্কা না-করেই চলল সিঁদুরখেলা। বিধিভাঙা ভিড় গত কয়েক দিনে যে-ভাবে উৎসবে মেতেছিল, অন্তিম দিনেও তার ব্যতিক্রম হল না। পথেঘাটে জনতার ঢেউ আছড়ে পড়েনি ঠিকই, তবে সিঁদুরখেলা এবং বিসর্জনে কোভিড বিধি মান্য করার তাগিদ দেখা যায়নি। বিধি ভাঙার খেলায় খাস কলকাতাকে হারিয়ে দিয়েছে শহরতলি ও দূরবর্তী বিভিন্ন জেলা। সর্বোপরি বিধি পালনে কড়া হতে দেখা যায়নি প্রশাসনকেও। অনেকেরই প্রশ্ন, যদি বিধি পালনে কড়াকড়ি না-থাকে, তা হলে ঘটা করে নির্দেশিকা প্রকাশের প্রয়োজন কী?
বাধ্যতামূলক ভাবে টিকার জোড়া ডোজ ছাড়াও হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, একসঙ্গে যথাসম্ভব কম মহিলাকে নিয়ে সিঁদুর খেলতে হবে। কিন্তু এ দিন অনেক জায়গাতেই সিঁদুরখেলার অনুষ্ঠানে লোকসংখ্যার সীমা মানা হয়নি। রঘুনাথপুর, আদ্রা ও পুরুলিয়া শহরের মণ্ডপগুলিতে সিঁদুর খেলতে হাজির হন বহু মহিলা। তাঁদের মধ্যে অল্প কয়েক জনের মুখে মাস্ক ছিল। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে সিঁদুর খেলতে মহিলার ভিড় উপচে পড়ে। পারস্পরিক দূরত্ব-বিধি শিকেয় উঠেছে সেখানে।
জোড়া টিকার শংসাপত্র দেখা হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায়। তবে বীরভূমের সিউড়ির চৌরঙ্গি সর্বজনীনের মতো কোনও কোনও পুজো কমিটি ব্যতিক্রমী হিসেবেই শংসাপত্র দেখে তবেই সিঁদুরখেলায় যোগ দিতে দিয়েছে।
বিসর্জনেও ধরা পড়েছে বিধি ভাঙার ছবি। শহরতলির বহু জায়গায় ভিড় জমিয়ে, শোভাযাত্রা করেই বিসর্জন হয়েছে। নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রামের মতো এলাকায় দেদার ফেটেছে শব্দবাজিও। বসিরহাটের টাকিতে দু’দেশের প্রতিমা বিসর্জনে স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার বালাই ছিল না। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টি হলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই আকাশ ছিল ঝকঝকে। দুপুরেই শুরু হয় বিসর্জন। দশমীর সকালেই কোচবিহারে রাজ আমল থেকে চলে আসা বড় দেবীবাড়ির প্রতিমা বিসর্জন দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। উধাও হয়ে যায় করোনা বিধি। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির বিসর্জন ঘিরেও ছিল একই চিত্র। গত বছর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রতিমা বিসর্জনে ‘ডুমনি দহে’ নৌকাডুবিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। সেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে এ বার প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল প্রশাসন।
বিকেলে একের পর এক বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরোতে থাকে। শিলিগুড়িতে মহানন্দা নদীর বিভিন্ন ঘাটে করোনা বিধি পালন নিয়ে প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকলেও শোভাযাত্রায় তেমন নজর ছিল না বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, মালদহ, কোচবিহারেও একই চিত্র।
তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক জায়গায় এ দিনের ভাসানে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। পূর্ব মেদিনীপুরে ভিড় ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শান্তিপুর, ফুলিয়া, রানাঘাট, করিমপুর-সহ সর্বত্রই প্রতিমার সঙ্গে আসা মানুষ এবং ভাসান দেখতে ঘাটে হাজির আমজনতার অধিকাংশের মুখে ছিল না মাস্ক। ভেসে গিয়েছে দূরত্ব-বিধিও। শান্তিপুরে উপনির্বাচন থাকায় বিসর্জনের বিভিন্ন ঘাটে হাজির হয়ে জনসংযোগের কাজটাও অনেকাংশে সেরে নিয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা।
বিসর্জনের ক্ষেত্রে কলকাতায় অন্তত নিরাপত্তার খাতিরে কড়াকড়ি ছিল বেশি। লালবাজারের খবর, সব ঘাটেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ২৪টি ঘাটে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা নৌকা নিয়ে টহল দিয়েছেন। ঘাটে, নদীবক্ষে মোতায়েন ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং ডুবুরিরা। ঘাটের কাছে ভিড় করতে দেওয়া হয়নি। শহরের বিভিন্ন পুকুর এবং জলাশয়েও বিসর্জন হয়েছে। সেখানেও নজরদারি ছিল। আগামী সোমবার পর্যন্ত এই বন্দোবস্ত থাকবে বলেও জানিয়েছে লালবাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy