বেঙ্গল ক্লাবে দ্য টেলিগ্রাফের সহায়তায় গাঁধী নিয়ে আলোচনাচক্রে (বাঁ দিক থেকে) সুদর্শন আয়েঙ্গার, সুধীন্দ্র কুলকার্নি, মেরুণা মুর্মু, কুণাল সরকার, তথাগত রায়, সুগত বসু এবং রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ
কংগ্রেসি রাজনীতিতে গাঁধী বনাম সুভাষ বিরোধের বয়ান উসকে দিচ্ছিলেন তথাগত রায়। সুভাষচন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র পুত্র, ইতিহাসবিদ সুগত বসুই মেঘালয়ের রাজ্যপালের কথার প্রতিবাদ করলেন।
রেঙ্গুন থেকে রেডিয়ো-বার্তায় ‘নেতাজিই’ গাঁধীকে ‘জাতির জনক’ আখ্যা দিয়েছিলেন মনে করালেন তিনি। নোয়াখালিতে ১৯৪৭এর সুভাষ-জয়ন্তীতে গাঁধীও বলবেন, হিন্দু-মুসলিমকে কেউই সুভাষের মতো মেলাতে পারেননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘গাঁধী কি আজও এ দেশের জাতির জনক’-শীর্ষক আলাপচারিতা তখন জমে উঠেছে।
‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার সহায়তায় বেঙ্গল ক্লাবের বচ্ছরকার আলোচনা-চক্রে গাঁধীর প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই আজকের হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের পটভূমিতে ঘুরেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর উপদেষ্টা সুধীন্দ্র কুলকার্নিই মনে করান, গাঁধীর কাছে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্বরাজের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ‘‘এখন তো দেশভাগেরই পরিস্থিতি। মানুষে মানুষে ধর্মে ধর্মে বিভাজন।’’— বললেন তিনি। সুধীন্দ্রের কথায়, ‘‘মুসলিম, পাকিস্তান এখন অপশব্দ এ দেশে। পাকিস্তান প্রশস্তির অভিযোগে নাবালিকাকে দেশদ্রোহী দেগে দেওয়া হচ্ছে। গাঁধী কিন্তু ভারত-পাকিস্তান— দু’টোই তাঁর দেশ মনে করতেন।’’ ভারত-পাকিস্তান সম্প্রীতি, সহযোগিতার রাস্তা বা কাশ্মীর-সমস্যার সমাধান— গাঁধীর দেখানো পথেই হতে পারত নিদান তাঁর। সুগতও এক মত: গাঁধীকে এখনই সব থেকে দরকার দেশের।
বহু মহামারি, বন্যা দেখলেও করোনাভাইরাসের মতো সঙ্কট গাঁধী দেখেননি বলে, খানিক লঘু স্বরে আলোচনায় ধরতাই দিয়েছিলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ-সঞ্চালক কুণাল সরকার। কুলকার্নির মতে, সাম্প্রদায়িক হিংসার থেকে বড় ভাইরাস কিচ্ছু নেই! একদা বিজেপি নেতা তথাগত রায় অবশ্য তখন গাঁধীকে না-পারছেন ফেলতে, না-পারছেন গিলতে। ‘‘গীতার বিনাশায় চ দুষ্কৃতম-এর ভাব গাঁধীতে নেই’’— বললেন তিনি। মত-পথের পার্থক্য থাকলেও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বীরদের প্রতি গাঁধীর অকৃত্রিম শ্রদ্ধার কথা স্মরণ করালেন সুগতবাবু। গাঁধীর আন্দোলনের সহযোগী আলি ভাইদের প্রতি রাজ্যপাল তথাগতবাবুর ‘অশ্রদ্ধার সুর’ অমার্জনীয় বলতেও পিছপা হননি তিনি।
‘‘সত্য, অহিংসা, ঐক্যর আদর্শের বাইরেও গাঁধীর ‘অভয়’ বা ভয়হীনতাকেও বিশেষ প্রয়োজন আজ’’, বললেন ইতিহাসবিদ তথা অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘গাঁধী জীবনে ভয় পাননি। জোহানেসবার্গে শ্বেতাঙ্গরা অন্যায় ভাবে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার পরেও না! সাম্প্রদায়িক হিংসার পটভূমিতে রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ, গাঁধীর দেশকে মেলে ধরতে গাঁধীর ভয়হীনতাই পাথেয়।’’ নিজেকে জাতির জনকের ‘নিমরাজি মেয়ে’ বলছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা মেরুণা মুর্মু। গাঁধী-আম্বেডকর বিতর্ক মনে করিয়ে ভিনধর্মীদের সঙ্গে আহার বা আন্তঃধর্মে বিয়ে নিয়ে গাঁধীর আপত্তির কথা বলেন তিনি। সুগত মনে করালেন, পরে এই গাঁধীই নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।
‘‘সত্য নিয়ে গাঁধী সদা ব্যতিব্যস্ত থাকলেও এ যুগ তো উত্তর-সত্য বা পোস্ট-ট্রুথের। (মানে সত্যের এক কাঠি উপরে যুগটা!)’’— খানিক ভিন্ন সুরে গাঁধীর প্রাসঙ্গিকতা খুঁজলেন গাঁধী-বিশেষজ্ঞ তথা গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সুদর্শন আয়োঙ্গার। কিন্তু গাঁধীর আত্মনিরীক্ষণ, আত্মপরীক্ষণ আত্মসংশোধনের আদর্শে ক্লান্তি নেই বললেন তিনি। দূর্দিনে এই গাঁধীতেই দেশ বার বার আস্থা রেখেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy