শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
প্রশ্ন: এত আশা নিয়ে শিলিগুড়ির মানুষ আপনাকে পর পর জেতাচ্ছেন। মেয়রও হয়েছেন। অথচ আপনি নিজেই বারবার বলছেন, রাজ্যের থেকে টাকা পাচ্ছেন না। কাজ থমকে যাচ্ছে। বোর্ড চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিরোধীরা তো আপনার ইস্তফা চেয়ে পোস্টার দিচ্ছেন, কী বলবেন?
উত্তর: প্রথমত, শিলিগুড়ির মানুষ আমাকে মেয়র করেছেন ২০২০ সাল পর্যন্ত। যাতে আমি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলি পূরণ করতে পারি। কোথায় বাধা এলে তাও মানুষের কাছে তুলে ধরা আমার কর্তব্য। অসহযোগিতা এলে সেটাও নাগরিকদের জানাতে আমি দায়বদ্ধ। সেটাও জানাচ্ছি। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অনেক কাজ তো করছি। দ্বিতীয়ত, যত অসহযোগিতা আসুক না কেন, আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই। তৃতীয়ত, কোনও চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করব না। কারও পায়ে কোনও দিন পড়িনি। কাজেই ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি তো জবরদখল করে, নির্বাচন এড়িয়ে মেয়র হইনি। নির্বাচিত হয়েই মেয়র হয়েছি। আমাকে মেয়র হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা করা আইন ও সাংবিধানিক ভাবে রাজ্য সরকারের পক্ষে বাধ্যতামূলক।
প্রশ্ন: বলছেন, কাজ করেছেন। আগে বিধায়ক থাকাকালীন আপনি উড়ালপুল, সেতু, রাস্তা, স্টেডিয়াম-সহ নানা বড় প্রকল্পের কাজ করেওছেন। কিন্তু শিলিগুড়ির মেয়র হিসেবে এখনও অবধি কোন বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন?
উত্তর: মেয়র হিসেবে প্রথম যেটা করেছি সেটা হল পুর এলাকায় একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ আনা। স্বচ্ছ পুর প্রশাসন তৈরি করেছি। আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি, নিজস্ব রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করেছি। গরিব মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বস্তি উন্নয়নের কাজ করেছি। প্রায় ১৫০টি বস্তি রয়েছে। সেখানে সুসংহত বস্তি উন্নয়নের প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেটা চালু করিয়েছি। বার্ধক্য ভাতা বিলি, গরিবদের চাল বিলির কাজও বেশি হচ্ছে। নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৪০০০ জন গরিব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দিচ্ছি। ২৭৫০ জনকে মাসে ১০ কেজি চাল দিচ্ছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। ১০০০ বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ১৩০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৮০০০ সদস্যাকে নানা ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫০ জন মেয়েকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দক্ষ করার জন্য ১৭৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০টি হেলথ সেন্টার নতুন করে নির্মাণ করে চালু করা হয়েছে। রাস্তা তৈরি করেছি। শুধু পুরসভার পূর্ত বিভাগই ৪০ কোটি টাকার কাজ করিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগে অনেক বাধার মধ্যেও অনেক কাজ করেছি।
প্রশ্ন: তার মানে বস্তি উন্নয়নে রাজ্য সাহায্য করছে। না হলে টাকা পাচ্ছেন কোথায়!
উত্তর: দুঃখের বিষয় হল, বস্তি উন্নয়নে রাজ্য টাকা দিচ্ছে না। বেসিক মিনিমাম সারভিস, হাউজিং ফর অল, আর্বান ওয়েজ এমপ্লয়মেন্টে—এই ৩টি প্রকল্পে আমাদের প্রাপ্য ৫০ কোটি টাকা। অন্য পুরসভাগুলি পেয়েছে। আমাদের প্রাপ্য দেওয়া হয়নি। যা করেছি তা পুরোনো অর্থে, আমাদের এই ১৪/১৫ মাসে এনইউএলএম বা এনইউএইচএম কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাদে রাজ্যের বস্তি উন্নয়নে অর্থ পাইনি।
প্রশ্ন: সাফাই নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। কী বলবেন?
উত্তর: শিলিগুড়ির জনঘনত্ব হু হু করে বাড়ছে। একটা পাড়ায় গত ১০ বছরে ৩ গুণ পরিবার থাকছে। এত বাড়তি লোক। অথচ সাফাইয়ের পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে না। পুরসভায় সাফাই বিভাগে কোনও ইঞ্জিনিয়র নেই। স্যানিটরি ইন্সপেক্টর মোটে চার জন। ভেহিকেল ইঞ্জিনিয়র নেই। কলকাতা পুরসভায় সব আছে। আড়াই হাজার কর্মী রোজ জঞ্জাল সাফাই করে। সাফাইয়ের মূল সমস্যা হল, রাস্তায় জমে থাকা জঞ্জাল তুলতে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে। এটাও ঠিক হয়ে যাবে। ‘অ্যাপ’ চালু হয়েছে। কেউ জঞ্জালের ছবি পাঠিয়ে ঠিকানা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: নিকাশি নিয়েও প্রশ্ন আছে।
উত্তর: নিকাশি আগের চেয়ে অনেক ভাল করেছি। এ বার রেকর্ড বৃষ্টি হলেও শিলিগুড়িতে কোথাও বেশিক্ষণ জল জমে থাকেনি। আমরা অনেক আগেই নর্দমাগুলির স্রোত ঠিক রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ায় সেটা হয়নি। তবে হ্যাঁ, নাগরিকদের আর একটু বেশি সচেতন হতে হবে। নর্দমায় আবর্জনা ফেলাটা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে তাঁদের। হাইড্রান্টের উপরে নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। এটা পুরসভার পক্ষে একা করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: শহরের বাতাসে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, আপনার দলের অমুক কাউন্সিলর চলে যাচ্ছে। কখনও শোনা যাচ্ছে ৫-৬ জনের সঙ্গে ফাইনাল কথা হয়ে গিয়েছে। আবার কখনও নানা টাকার অঙ্কও বাতাসে ভাসছে। কেউ নাকি যোগ দিলেই মেয়র, কেউ ডেপুটি মেয়র, কেউ বিল্ডিং এমআইসি হয়ে যাবেন?
উত্তর: হ্যাঁ, সত্যিই নানা কথা বাতাসে ভাসছে। কখনও রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি দল ছাড়বেন! আশ্চর্য ব্যাপার তো! আমাদের এত দিনের সতীর্থ দল ছাড়বে? সভাধিপতি বিরক্ত। আমি অবশ্য এমন রটনায় অবাক হচ্ছি না। যত খুশি রটুক। আমি চ্যালেঞ্জ করছি রটনাকারীদের। কারও যদি সত্যিই ক্ষমতা থাকে তো শিলিগুড়ি পুরসভা, মহকুমা পরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনুক। তা হলেই সব জারিজুরি বোঝা যাবে। তৃণমূল বরং নিজেদের সদস্যদের ধরে রাখার কথা ভাবুক। আমি বলছি, আমাদের ২৪ জনের মধ্যে একজনও যাবেন না।
(ক্রমশ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy