ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে অশান্তির আবহে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলন থেকে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে শান্ত থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভয় দিলেন, ‘‘এখানে আমি আছি।’’ যেহেতু ওয়াকফ সংশোধনী আইন করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, তাই আন্দোলন বাংলা থেকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা শান্ত থাকুন। বি কুল অ্যান্ড পিসফুল।’’
বুধবার নেতাজি ইন্ডোরে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সম্মেলনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি জানান, ইদের পরে ‘ইদ মিলন’ হিসেবে ওই সম্মেলন পূর্বনির্ধারিত। প্রথমে ঠিক ছিল ৭ এপ্রিল সম্মেলন হবে। কিন্তু ‘পরিস্থিতির চাপে’ তা পিছিয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘আমন্ত্রিত’ হিসাবেই তিনি গিয়েছিলেন ওই সম্মেলনে। মমতা স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন, তিনি বা রাজ্য সরকার ইমাম-মোয়াজ্জিমদের ডাকেননি। বরং তাঁদের ডাকেই তিনি গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি ইমাম সংগঠনের ডাকে বুধবারের সম্মেলন হয়েছে। বক্তৃতায় সময় পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের নথি অনুযায়ী রাজ্যে ৪০,৪৮৯ জন ইমাম রয়েছেন। মোয়াজ্জিমের সংখ্যা ২৮,০০০। ইমাম-মোয়াজ্জিমদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আপনাদের হাতজোড় করে বলছি, কেউ অশান্তি করতে চাইলে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করুন। অশান্তি করতে দেবেন না। ধর্মীয় জায়গা থেকে আপনারা শান্তির আবেদন জানান।’’ মমতা বলেন, ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত আবেদন। চেয়ারের আবেদনও বলতে পারেন।’’ অর্থাৎ, ব্যক্তিগত স্তরে এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উভয় অবস্থান থেকেই তিনি ওই আবেদন জানাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অশান্তি’ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা সংবিধান রক্ষার আন্দোলন করুন।’’ তড়িঘড়ি ওয়াকফ সংশোধনী আইন তৈরি করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘এত তাড়াহুড়োর কী ছিল!’’
আরও পড়ুন:
সংশোধিত ওয়াকফ আইন যে বাংলায় কার্যকর হবে না, তা আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারের অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা উপস্থিত ইমাম-মোয়াজ্জিমদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাংলায় আন্দোলন করলে হবে না। আন্দোলন করতে হলে দিল্লিতে যান। ট্রেনে যান। প্লেনে যান। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান। রাস্তায় থাকুন। ময়দানে থাকুন।’’ দিল্লিতে সেই আন্দোলনে যে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তৃণমূলের সাংসদেরাও থাকবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। সম্প্রতি রামনবমীতে একাধিক এলাকায় দেখা গিয়েছিল, সম্প্রীতির বার্তা দিতে হিন্দুদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটছেন মুসলিমেরা। কোথাও জলসত্রও দিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। মমতা বলেছেন, ‘‘রামনবমীতে ওদের (বিজেপি) পরিকল্পনা ছিল অশান্তি করার। কিন্তু আপনারা তা ভেস্তে দিয়েছিলেন। সঙ্কটের সময়ে ঠান্ডা থাকুন, সংযত থাকুন। আপনারা উত্তেজিত হলে আপনারা হারবেন। শান্ত থাকলে জিতবেন।’’ আইন এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংবিধান সংশোধন না করে বিল পাশ করে সংশোধনী আইন করা বিজেপির চালাকি। সংবিধান সংশোধন করতে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা লাগে। তা নেই বলেই এ ভাবে করেছে।’’ মমতার দাবি, আইনশৃঙ্খলার মতো জমিজমার বিষয়ও রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে তা-ও ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে বলে।
মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকার সঙ্গে অশান্ত হয়েছিল ভাঙড়ও। তা নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘ভাঙড়ে ও সব করার প্রয়োজন ছিল না। সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে। কেউ কেউ নিজের আইডেন্টিটি (পরিচয়) তৈরি করার জন্য রাজনৈতিক ভাবে এগুলো করছে।’’ পুরো পরিস্থিতির সাপেক্ষে বহু ‘ভুয়ো খবর’ থেকেও সতর্ক থাকতে আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের পুরনো ছবিকে বাংলার বলে চালানো হচ্ছে। বিজেপি এটা করছে। ফেকের যুগ চলছে। ফেককে আপনারা বিজেপির কেক হতে দেবেন না।’’
মঙ্গলবার রাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে উত্তর দিনাজপুরের ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের এক ব্যক্তির বক্তব্য-সহ বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে সেই ব্যক্তিকে ওয়াকফ নিয়ে ‘উগ্র’ আন্দোলনের পন্থার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল। মমতা কাউকে নির্দিষ্ট করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘জেলায় জেলায় কেউ কেউ বেসামাল কথা বলছেন। পরিচিতি পাওয়ার জন্য তাঁরা এগুলো করছেন। দয়া করে বলছি, এগুলো করবেন না।’’