তৃণমূল বিধায়ক (বাঁ দিক থেকে) হুমায়ুন কবীর, রবিউল আলম চৌধুরী, শাহিনা মমতাজ এবং আব্দুর রজ্জাক। — ফাইল চিত্র
কংগ্রেস, বিজেপি ঘুরে বছর তিনেক আগে তৃণমূলে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিলেন। নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভরতপুর কেন্দ্র থেকে জোড়াফুলের টিকিটে জিতেওছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আবার ‘বিক্ষুব্ধ’ মুর্শিদাবাদের সেই বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তবে এ বার তিনি একা নন। তাঁর সঙ্গী জেলার আরও ৩ তৃণমূল বিধায়ক— রেজিনগরের রবিউল আলম চৌধুরী, নওদার শাহিনা মমতাজ এবং জলঙ্গির আব্দুর রজ্জাক।
সকলেরই অভিযোগ দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। ‘পঞ্চায়েতে টিকিট বিলিতে অনিয়ম’ নিয়ে। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনুগামীদের প্রার্থী করে লড়াইয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ওই ৪ তৃণমূল বিধায়ক। হুমায়ুনের যুক্তি, ‘‘বিরোধী প্রতীকে জয়ী হয়েও ৩ মাসের মধ্যে তৃণমূলে জায়গা হয়েছে বাইরন বিশ্বাসের! আমরাও তৃণমূলে থেকে নির্দল প্রার্থী দিয়ে প্রয়োজনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ করব।’’ বৃহস্পতিবার বেলডাঙ্গার তৃণমূল দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে হুমায়ুন যখন এ কথা বলছেন, তখন তাঁর পাশেই বসে ছিলেন জেলার আরও ৩ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল বিধায়ক।
নির্দল প্রার্থী প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে হুমায়ুন যে যুক্তি দিয়েছেন, তা সমর্থন করেছেন রবিউল, শাহিনা, আব্দুর। প্রত্যেকেই হুমায়ুনের সুরে সুর মিলিয়ে অপছন্দের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজেদের মনোনীত নির্দল প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বুধবার পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কার্যত দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন তৃণমূলের ৪ সংখ্যালঘু বিধায়ক। তবে দল ছাড়ার সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ করে করে দিয়ে হুমায়ুনরা জানিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলেই থাকবেন।
দীর্ঘ টালবাহানার পর বুধবার প্রকাশিত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের পঞ্চায়েতের প্রার্থিতালিকা। রেজিনগরের বিধায়ক রবিউলের অভিযোগ, বেশির ভাগ জায়গায় বিধায়কদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা কথা বলেছিলেন— স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের ভোটে দাঁড় করাবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে প্রধানরা লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি করেছেন, তাঁরাই প্রার্থী হয়েছেন!’’ সেই সঙ্গে মমতা এবং অভিষেকের উদ্দেশে রবিউলের সতর্কবার্তা— ‘‘এই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে যদি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়, তবে লোকসভা ভোটে মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবে! তখন কিন্তু আমাদের দোষ দিলে হবে না।’’
হুমায়ুন অভিযোগ করেন, তাঁর মনোনীত মাত্র ১০ শতাংশ প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে দল। তাই বাধ্য হয়ে ভরতপুরে বিধানসভা এলাকায় সব আসনেই ‘নির্দল’ প্রার্থী দাঁড় করাবেন তিনি! ঘটনাচক্রে, ৪ বিক্ষুব্ধ বিধায়কেরই অভিযোগ মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা কান্দির বিধায়ক অপূর্ব (ডেভিড) সরকার এবং দলের জেলা সভাপতি শাওনি সিংহরায়ের বিরুদ্ধে। দলের সভাপতি শাওনিকে ‘হেরো প্রার্থী’ বলে কটাক্ষ করে হুমায়ুন বলেন, ‘‘যাঁদের নিজেদের জেতার ক্ষমতা নেই, তাঁরাই আবার ইচ্ছামতো প্রার্থী করছেন!’’ প্রসঙ্গত, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন শাওনি।
নওদার বিধায়ক শাহিনাও বৃহস্পতিবার শাওনিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা আগে সভাপতি যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা উল্টো হয়ে যাচ্ছে! এই হঠকারিতার কোনও মানে হয় না।’’ জলঙ্গির বিধায়ক আব্দুর রজ্জাক বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল এখনও প্রার্থী ঠিক করতে পারছে না। এই ভাবে দল চললে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে।’’
সাংবাদিক বৈঠক শেষে ৪ বিদ্রোহী বিধায়ক জানান, তৃণমূল নেতৃত্ব যাঁদের টিকিট দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কাটমানি, তোলাবাজি, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দল যদি ওই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতাদের নিয়ে রাজনীতি করার কথা ভাবে। তা হলে আগামী দিনে তাঁরাও ‘নতুন করে ভাববেন’! জেলার ৪ বিধায়কের বিদ্রোহ প্রসঙ্গে কান্দির বিধায়ক অপূর্ব বলেন, ‘‘তৃণমূল বড় দল। তার মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতেই পারে। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত সমাধান হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা সকলকে মানতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy