শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
আর জি কর-কাণ্ডের আবহে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের দুর্নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সিবিআই, ইডি তদন্ত করছে। এই নিয়ে সরব হয়ে ‘স্বাস্থ্য ভবন সাফাই’ অভিযান ও টানা অবস্থানও করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এই পরিস্থিতিতে জোরালো হল রাজনৈতিক তোপও। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের কয়েক জন শীর্ষ-কর্তার নাম করে তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, তদন্ত হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পুরো স্বাস্থ্য দফতর জেলে যাবে! শুভেন্দুর অভিযোগে আমল না দিয়ে তাঁকে পাল্টা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার জন্য ‘পরামর্শ’ দিয়েছে তৃণমূল।
স্বাস্থ্য দুর্নীতি ও ধর্ষণ-খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ইতিমধ্যেই আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশ কাচের তলায় রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ও। এই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির পুরনো কার্যালয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “তদন্ত হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-সহ পুরো স্বাস্থ্য দফতর জেলে যাবে। গোটা প্রক্রিয়ায় এস পি দাশের প্রশ্রয় রয়েছে। মাননীয়ার প্রিয় পাত্র সন্দীপ ঘোষ এক সঙ্গে তিনটি চাকরি পান। তাঁর মাথায় এস পি দাশের, মানে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ছিল।” স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মদতেই স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ, চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনায় হাজার-হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেতা। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্নীতির নানা তথ্য চিকিৎসকেরাই তাঁদের দিচ্ছেন দাবি করে সেই সব তথ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন শুভেন্দু।
কী ধরনের দুর্নীতি, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দরপত্র, কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ‘অনিয়ম’ নিয়েও সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর অভিযোগ, “মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির নামে দরপত্র ছাড়া পাঁচটি সংস্থাকে সব বরাত দেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলি জনৈক মেনকা গম্ভীরের (ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার নামও একই) কাছের লোকের।” এক স্বাস্থ্যকর্তা ২০১৬ থেকে এবং তার পরে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বর্তমান চেয়ারপার্সন এই ‘অনিয়ম’ করেছেন বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। ওই চেয়ারপার্সনের কথা বলে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “স্বাস্থ্য দফতরের পদে থাকাকালীন পঞ্জাব থেকে ৮ কোটি টাকার অ্যাম্বুল্যান্স কিনেছিলেন। বাংলায় কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স নেই? কাটমানি খাওয়ার ব্যবসা!” মেনকার পরিবারকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কোভিডের সময়ে কোনও দরপত্র ছাড়া পিপিই কিট, মাস্কের মতো নানা জিনিসপত্র কেনার অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের’ টাকা তছরুপ হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন শুভেন্দু।
সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব-সহ কয়েক জন স্বাস্থ্য-কর্তার বেনামে বেআইনি সম্পত্তিও রয়েছে বলে অভিযোগ করে ইডি-র তদন্ত চেয়েছেন বিরোধী নেতা। এ ছাড়া, রাজ্যের হাতে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা থাকার সময়ে তৃণমূলের লোকজনের পরিবারের সদস্যেরা কী ভাবে ডাক্তারিতে সুযোগ পেয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু।
তৃণমূল অবশ্য শুভেন্দুর যাবতীয় অভিযোগে আমল দেয়নি। দলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, “শুভেন্দু বাজার গরম করছেন কেন? কাউকে কলুষিত করতে এ সব কথা বাইরে না বলে, তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা নিয়ে সিবিআই, ইডি অফিসে গিয়ে দিয়ে আসুন!” তাঁর দাবি, “আসলে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন ওঁরা। আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই এবং ইডি-কে বলে দিচ্ছেন, অমুককে ধরতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy