Advertisement
E-Paper

রাতের আগুনে পুড়ে গেল জলদাপাড়া

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ ও জাতীয় উদ্যানের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অগ্নিকাণ্ডের ওই ক্ষতি অপূরণীয়।

মঙ্গলবারও আগুন জ্বলছে জলদাপাড়ার। ছবি: নারায়ণ দে

মঙ্গলবারও আগুন জ্বলছে জলদাপাড়ার। ছবি: নারায়ণ দে

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০৩:২৪
Share
Save

আমাজ়নের আগুনের ক্ষত এখনও দগদগে। তার মধ্যে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল উত্তরবঙ্গের ‘আমাজ়ন’ বলে পরিচিত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। সোমবার রাতে জলদাপাড়া জঙ্গলের মালঙ্গি বিটের তোর্সার চর লাগোয়া ঘাসবনে এই আগুন লেগে ছাই হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এর ফলে ওই ঘাসবন নির্ভর প্রাণিকূল বিপদে পড়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে হরিণ, বিপন্ন প্রজাতির খরগোশ, ময়ূর। বন দফতর সূত্রে খবর, এই আগুনে অজস্র কীটপতঙ্গ, জীবজন্তুর ডিম নষ্ট হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ঠিকই, কিন্তু মঙ্গলবার কিছু জায়গায় ফের ধিকি ধিকি করে আগুন জ্বলতে দেখা গিয়েছে।

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ ও জাতীয় উদ্যানের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অগ্নিকাণ্ডের ওই ক্ষতি অপূরণীয়। এতে তৃণভোজীদের বাসস্থান, খাদ্য সঙ্কট হতে পারে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ঘাসবন এলাকা গন্ডার, বাইসন, হরিণের মতো তৃণভোজীর খাদ্যভাণ্ডার। প্রচুর কীটপতঙ্গ, পাখি, ছোট জীবজন্তুর বাসভূমি। এখানে আগুন লাগলে জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।’’

কিন্তু এই আগুন লাগল কী ভাবে? বন দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, মনে করা হচ্ছে জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেট থেকে এই আগুন ছড়িয়েছে। তা-ই বা লাগল কী ভাবে? বন দফতর সূত্রের দাবি, একাধিক কারণে তা লাগতে পারে। প্রথমত, গরু চড়াতে জঙ্গলে ঢুকে পড়া কেউ যদি জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেটের টুকরো ফেলে, তার থেকে শুকনো পাতায় আগুন ধরে যেতে পারে। এখন আবহাওয়াও শুকনো। তাই দ্রুত সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয়ত, এই সময়ে তোর্সায় মাছ ধরতে আসে অনেকে। তখন তাদেরই কেউ হয়তো জ্বলন্ত বিড়ি বা সিগারেট ফেলেছে। তৃতীয়ত, অনেক সময়ে এই ভাবে আগুন লাগিয়ে শুকনো ঘাস পোড়ানোও হয়।

• অভয়ারণ্যের আয়তন: প্রায় ২১৬ বর্গকিলোমিটার। • পুড়ে ছাই: ০.৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার ঘাসবন। • পুড়ল: বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। কাশ, পুরুন্ডি ও ঢাড্ডা জাতীয় ঘাসের জঙ্গল, ছোট গাছপালা। • ক্ষতি: আর্থিক হিসেবে জানাতে পারেননি বনকর্তারা। বাস্ততন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি। তৃণভোজীদের খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা। • জীবজন্তুর ক্ষতি: প্রচুর কীটপতঙ্গ, ছোট জীবজন্তুর প্রাণহানির আশঙ্কা। নষ্ট হতে পারে ময়ূরের ডিম।

এই আগুন যে লাগানোই হয়েছে, সে কথা বুঝিয়ে দিয়ে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক ভাবে সাধারণত জঙ্গলে আগুন লাগে না।’’ তিনি আরও জানান, বড় কোনও জন্তুর মৃত্যুর খবর আপাতত নেই। জলদাপাড়া যে বন্যপ্রাণ এলাকার আওতাধীন, সেই কোচবিহার বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “তোর্সার চর ও লাগোয়া ঘাসবনের ৭০-৭৫ হেক্টর এলাকা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” তাঁর কথায়, “ওই দিনই নজরমিনার থেকে ধোঁয়া দেখে বনকর্মীরা এক ব্যক্তিকে ধরার চেষ্টাও করেছিলেন।” অনিমেষ বলেন, ‘‘জঙ্গলে বেআইনি প্রবেশ বন্ধে কড়া ব্যবস্থা দরকার।’’ তবে বনকর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় যে আগুন সামলানো গিয়েছে, তা সকলেই মেনে নিয়েছেন।

Jaldapara Sanctuary Fire Wildlife

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}