মারধর ও ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ জানানোর পরেও ধৃত যুবক কী ভাবে জামিন পেয়ে গেলেন, পুলিশের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন এক বধূ। অভিযোগ, সাহায্যের বদলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ওই গৃহবধূকে বলেন, ‘ধর্ষণ করবে বলেছে। করে দিয়েছে কি?’ শুধু তা-ই নয়। পুলিশের কাছে করা অভিযোগ না তোলার জন্য ওই মহিলার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করারও অভিযোগ উঠল অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে।
এই সব কথা জানিয়ে শুক্রবার বালির বাসিন্দা ওই বধূ হাওড়া সিটি পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (উত্তর)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই গৃহবধূ আজ একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বালির পূর্ব আনন্দনগরের বাসিন্দা ওই গৃহবধূ ঘরে বসে তাঁর ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়ে ওই বাড়ি লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় বসে স্থানীয় কয়েক জন যুবক নেশা করছিলেন। নিজেদের মধ্যে মোবাইলে গান চালিয়ে চেঁচামেচিও করছিলেন বলে অভিযোগ। তখনই তাঁদের চেঁচামেচি বন্ধ করতে বলেন ওই বধূ।
ওই গৃহবধূ পুলিশের কাছে করা অভিযোগে জানিয়েছেন, চেঁচামেচি বন্ধ করতে বলতেই কয়েক জন যুবক তাঁর উপরে আক্রমণ করেন। অশ্লীল ভাষায় কথা বলে মারধর করা হয় তাঁকে। ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তখন ভয়ে ওই তরুণী তাঁর আত্মীয়দের ডাকেন। মহিলার আত্মীয়দের উপরেও যুবকেরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। এর পরে ওই রাতেই নিশ্চিন্দা থানায় গিয়ে জেনারেল ডায়েরি করেন ওই বধূ। পুলিশও ওই দিন গভীর রাতেই অভিযুক্ত এক যুবককে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাঁকে ২৫ নভেম্বর সকালে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় ধৃতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
ওই দিন বিকেলে নিশ্চিন্দা থানায় গিয়ে মেজবাবু প্রদীপ কুণ্ডুর সঙ্গে দেখা করেন ওই বধূ। ওই মহিলার বক্তব্য, “লিখিত অভিযোগ জমা নিয়ে রসিদ দিতে বললে মেজবাবু রাজি হননি। ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পরেও কেন এক জনকে আটক করে ছেড়ে দেওয়া হল, জানতে চাইলে অফিসার খুব দুবর্ব্যহার করে বলেন ‘ধর্ষণ করবে বলেছে। করে দিয়েছে কি?’’ এর পরে ২৬ নভেম্বর সকালে অবশ্য নিশ্চিন্দা থানার আইসি জুলফিকর মোল্লার হস্তক্ষেপে ওই গৃহবধূ প্রতিবেশী পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। পুলিশও মারধর ও ধর্ষণের হুমকির মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। তবে পাঁচ অভিযুক্তই আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেন।
গৃহবধূ পুলিশকে অভিযোগ করেছেন, এর পরে গত ৩০ নভেম্বর খোকা ভট্টাচার্য নামে স্থানীয় এক যুবক তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসেন। ওই বধূ বলেন, “ওই যুবক নিজেকে স্থানীয় তৃণমূলের কর্মী ও নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়েছেন। হুমকি দিয়ে বলেন, অভিযোগ না তুললে খারাপ হবে। কেউ কিছু করতে পারবে না।” অভিযোগ, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে ওই তরুণী গৃহবধূর স্বামী বাজারে যাওয়ার সময়ে তাঁকে আটকান খোকা। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ কেন তোলা হয়নি, তা জানতে চেয়ে ওই বধূর স্বামীকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বেলুড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
যদিও খোকা ভট্টাচার্য বলেন, “রাস্তায় দেখা হলে আমি ওই তরুণীর স্বামীর কাছে শুধু ঘটনাটি জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ঝগড়া শুরু করে আমাকে ধাক্কা মারেন। পরে আমিও ধাক্কা দিই।”
অন্য দিকে, স্থানীয় তৃণমূল
নেতা তথা হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্য বিকাশ দে বলেন, “ওই যুবক তৃণমূল সমর্থক। তবে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে কাউকেই বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু ঘটনাটি বিকৃত করা হচ্ছে বলে মনে হয়।” ওই বধূ বলেন, “স্বামীকে মারধর করার পরে এফআইআর করতে গেলে ফের পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে।” যদিও পুলিশের দাবি, ওই গৃহবধূর স্বামীর মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে ওই ঘটনারও এফআইআর দায়ের করে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy