Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

দুই কিশোরের মৃত্যু দেখাল বিপর্যয় মোকাবিলার হাল

বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্যের পরিকাঠামো যে বিপর্যস্ত, এখনও চটজলদি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার মানসিকতাই যে তৈরি হয়নি, তার আরও এক বার প্রমাণ পাওয়া গেল রবিবার দুপুরে। হাওড়ার তেলকল ঘাটে দুই কিশোর তলিয়ে যাওয়ার পরেই খবর পাঠানো হয়েছিল চার দিকে। কিন্তু, উদ্ধারের কাজে রাজ্য প্রশাসন যে কতটা ব্যর্থ, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এ দিনের ঘটনা। সময় মতো উদ্ধার না হওয়ায় ডুবে মৃত্যু হল ওই দুই কিশোরের।

এক কিশোরের নিথর দেহ উদ্ধার করছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। রবিবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

এক কিশোরের নিথর দেহ উদ্ধার করছেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। রবিবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্যের পরিকাঠামো যে বিপর্যস্ত, এখনও চটজলদি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার মানসিকতাই যে তৈরি হয়নি, তার আরও এক বার প্রমাণ পাওয়া গেল রবিবার দুপুরে। হাওড়ার তেলকল ঘাটে দুই কিশোর তলিয়ে যাওয়ার পরেই খবর পাঠানো হয়েছিল চার দিকে। কিন্তু, উদ্ধারের কাজে রাজ্য প্রশাসন যে কতটা ব্যর্থ, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এ দিনের ঘটনা। সময় মতো উদ্ধার না হওয়ায় ডুবে মৃত্যু হল ওই দুই কিশোরের।

উদ্ধারের জন্য লঞ্চ থাকলেও সেখানে না ছিল ডুবুরি, না যন্ত্রপাতি। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ঘটা করে কলকাতা পুলিশের যে ‘বিশেষ’ দল বানানো হয়েছে, তারাও কতটা শ্লথ, তারও প্রমাণ পাওয়া গেল এ দিন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাজ্যের এক মন্ত্রী বার বার ফোন করায় ঘটনার তিন ঘণ্টা পরে কলকাতা থেকে সেই দল পৌঁছয়। তার পরে ঘাটের কাছেই নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার হয় দুই কিশোরের মৃতদেহ। স্থানীয় মানুষদের আক্ষেপ, সময় মতো দলটি এলে বাঁচানো যেত নবম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রকে। তাঁদের বাড়ি যেখানে, ব্যাঁটরা থানার সেই কালীপ্রসাদ ব্যানার্জি লেনে রবিবারের বিকেলের পরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

কেন দেরি হল আসতে? হাওড়া পুলিশের দাবি, ঘটনার পর পরই তারা খবর পাঠিয়েছিল কলকাতা পুলিশের কাছে। এমনকী, কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ অফিসারকে ফোন করেও অনুরোধ করা হয়। কলকাতা পুলিশের পাল্টা যুক্তি, তারা অনেক দেরিতে খবর পেয়েছে। তাই যেতে দেরি হয়েছে। চিরাচরিত সেই দায়িত্ব এড়ানোর খেলা।

পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে অভিজিৎ বাগ (১৬) এবং সাগর দে (১৪) আরও ছয় বন্ধুর সঙ্গে হাওড়া থানার তেলকল ঘাটে যায় স্নান সারতে। কেউই সাঁতার জানত না। বাকিরা ঘাটের কাছে দাঁড়িয়ে স্নান করলেও অভিজিৎ ও সাগর নদীর পাড়-লাগোয়া একটি বট গাছে উঠে যায়। গাছ থেকে একটি বড় ডাল নদীর উপরে ঝুঁকে এসেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই ডালের উপরে দু’জনে পৌঁছে ঝুলতে থাকে। অভিজিৎ ও সাগরকে নিয়ে ডালটি ভেঙে পড়ে নদীর জলে। তলিয়ে যায় দুই কিশোর। তখন গঙ্গায় ভরা কোটাল। ঘাটে যাঁরা স্নান করছিলেন, তাঁদের অনেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ওই দুই কিশোরকে। কিন্তু, লাভ হয়নি। স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রায় পৌঁছন ঘটনাস্থলে। জানানো হয় হাওড়া পুলিশকেও।

হাওড়া সিটি পুলিশের একটি লঞ্চ রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য। সেখানেও খবর যায়। সেই লঞ্চটি কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছেও যায় ওই ঘাটের কাছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘাটের একটু দূর দিয়ে লঞ্চটি ঘুরে চলে যায়। কেন? হাওড়া পুলিশের কমিশনার অজেয় রানাডে জানান, ওই লঞ্চে না আছে ডুবুরি, না যন্ত্রপাতি। আড়াই বছর আগে ডুবুরি ও যন্ত্রপাতি চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল প্রশাসনের কাছে। আজ পর্যন্ত তা পৌঁছয়নি। যদি কিছু না-ই থাকে তাহলে কেন লঞ্চটি শুধু ঘোরার জন্য ঘাটের কাছে এল? কোনও উত্তর নেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে।

এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য আলাদা করে বিপর্যয় মোকাবিলা দল রয়েছে কলকাতা পুলিশের। খবর পাঠানো হয় তাঁদের কাছেও। কিন্তু, হাওড়া ও কলকাতা দুই কমিশনারেটই এ নিয়ে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে। একদল বলছেন, তাঁরা আগেই খবর পাঠান। অন্য দলের দাবি, দেরিতে খবর পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে হাওড়ার বাসিন্দা তৃণমূল নেতা, রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় পৌঁছন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাওড়ার মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র। তখনও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। অসহায় অবস্থায় কয়েক জন পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন তেলকল ঘাটে। সেখান থেকেই অরূপবাবু ফোন করতে শুরু করেন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে পাঠাতে অনুরোধ করেন। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। আর কলকাতা থেকে রবিবার ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা-র দল পৌঁছয় বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ। তাঁরা নদীতে নামার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘাটের কাছ থেকেই পাওয়া যায় দুই কিশোরের দেহ।

অন্য বিষয়গুলি:

telkol ghat sagar dey abhijit bag southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy