উদ্ধার হওয়া তরুণী। নিজস্ব চিত্র।
যুবতীকে কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি, তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা, ভুয়ো সিবিআই পরিচয়ে টাকা দাবি-সহ একাধিক অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেফতার করল চন্দননগর পুলিশ। বুধবার ওই যুবতীকে বাইকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন দম্পতি। সেই সময় তিনি বাইক থেকে লাফ দেন। হুগলির শ্রীরামপুরের সুকান্তপল্লির কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা এর পর ওই দম্পতিকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ধৃতদের নাম জয় চক্রবর্তী এবং ঊষসী চক্রবর্তী। তাঁদের কাছ থেকে একটি নকল পিস্তল, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি মোবাইল ও একটি পরিচয়পত্র পাওয়া গিয়েছে। গোটা ঘটনাক্রমে পুলিশের অনুমান, নয়া কৌশলে তোলাবাজি চালাচ্ছিলেন ওই দম্পতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সবে তখন ভোর হচ্ছে। চার দিক কুয়াশায় ঢাকা। সুকান্তপল্লির কাছে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কয়েক জন রাস্তায়। পাশ দিয়ে যাওয়া বাইক থেকে আচমকাই তাঁরা এক যুবতীর চিৎকার শুনতে পান। দেখেন, এক যুবক দুই যুবতীকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরই এক জন ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবতী বাইক থেকে লাফ দেন। পথচারীদের কয়েক জন এর পর দৌড়ে গিয়ে বাইক আরোহীকে থামান। তাঁদের আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় শ্রীরামপুর থানায়। পুলিশ এসে তিন জনকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বেড়াল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাইক আরোহীর নাম জয়। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ঊষসী দক্ষিণেশ্বর স্টেশন চত্বর থেকে ওই যুবতীকে তুলে নিয়ে রাতভর আটকে রেখেছিলেন শ্রীরামপুরেরই একটি আবাসনে। বুধবার সকালে স্বামী-স্ত্রী বাইকে চাপিয়ে ওই যুবতীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় সুকান্তপল্লির কাছে ওই যুবতী বাইক থেকে লাফ দিতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের আটকান। ওই এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর পিন্টু নাগ বলেন, ‘‘যুবক নিজেকে প্রথমে সিবিআই অফিসার বলে পরিচয় দেন। পরে স্থানীয়েরা পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় তিনি জানান, এনজিও-তে কাজ করেন। পরে পুলিশকে ডাকা হয়।’’ পিন্টু জানিয়েছেন, বাইক থেকে লাফিয়ে পড়া যুবতী দাবি করেন, তাঁকে ওই দু’জন সারারাত আটকে রেখেছিল। অত্যাচারও করে। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। টাকাও চায়।
তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগকারী যুবতী দাবি করেন, তিনি পেশায় ডান্সার। তাঁকে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে তুলে আনেন অভিযুক্ত। পরে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। বুধবার ভোরবেলায় তাঁকে নিয়ে হাইওয়ে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সুকান্তপল্লির কাছে নেতাজি মোড় পেরোতেই তিনি লাফ দেন।
চন্দননগর পুলিশের ডিসি (শ্রীরামপুর) সায়ক দাস বলেন, ‘‘শ্রীরামপুরের বাসিন্দা জয় চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী উষসী রায় চক্রবর্তী ওই যুবতীকে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন থেকে তুলে আনেন। পূর্ব পরিচিত এক জনের মাধ্যমে জয়ের সঙ্গে যুবতীর পরিচয়। কাজ দেওয়ার নাম করে তাঁকে নিয়ে আসা হয়। এর পর শ্রীরামপুরে একটি ভাড়া নেওয়া আবাসনে আটকে রাখা হয়।’’ ডিসি জানিয়েছেন, নিজেকে সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে তদন্তের নামে ওই যুবতীকে ভয় দেখান জয়। টাকা দাবি করেন অভিযুক্তরা। নকল পিস্তল দিয়ে ভয় দেখানো হয়। মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। ব্যাঙ্ক ডিটেলস জানার চেষ্টা করেন। টাকা না পেয়ে ভোরে যুবতীকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ভয় পেয়ে যান।
ওই যুবতী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে হাই রোডে নিয়ে গিয়ে হয়তো মেরে ফেলা হবে, এই ভেবে তিনি রাস্তায় লোক দেখে বাইক থেকে লাফ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। যুবতীকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না সেটা দেখা হচ্ছে। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy