ভাবনায়: মগরা কোলা বান্ধব সমিতির মণ্ডপের থিম নারীশক্তি। নিজস্ব চিত্র
সরস্বতীর আরাধনা যেন মগরার মানুষের কাছে দুর্গাপুজো! বিদ্যার দেবীকে কেন্দ্র করে হুগলির এই জনপদে এখন তেমনই আবহ। রাজপথ থেকে অলিগলি ভাসছে আলোর বন্যায়। সেই আলোর সরণির গন্তব্য এক একটি চোখজুড়নো মণ্ডপে। সেখানে মানুষের ঢল নামছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বেখাপ্পা আকাশও ঘরবন্দি রাখতে পারেনি উৎসবমুখর জনতাকে।
মগরায় রেল স্টেশনের দু’ধার মিলিয়ে গোটা চল্লিশ বারোয়ারি সরস্বতী পুজো হয়। কয়েক বছর ধরে অনেক জায়গাতেই থিম পুজো হচ্ছে। এ বার পুজো শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। পুজো ভাবনার আঙ্গিকে কোথাও উঠে এসেছে এক টুকরো বৃন্দাবন। কোথাও তুলে ধরা হয়েছে নারীর যন্ত্রণা। কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভিন্ দেশের সংস্কৃতি। সঙ্গে রয়েছে প্রতিমার শৈলী এবং আলোকসজ্জার কারিকুরি। সব মিলিয়ে বৈচিত্রে ছয়লাপ।
কোলা বান্ধব সমিতির থিম — ‘নারীশক্তি’। মডেলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মা কী ভাবে শিশুকে বড় করে তোলেন। সেই শিশু এক দিন সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। অন্য দিকে, মা বৃদ্ধ হন। তাঁর ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, সন্তানের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েও নারীর এই করুণ পরিণতি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতেই এই ভাবনা। পুজোটির এ বার ১০১ তম বর্ষ। গঞ্জের বাজারে ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো পড়ল ৭০ তম বছরে। মগরা থানা সংলগ্ন জিটি রোডের ধার থেকে নাগরদোলা, বেলুন, হরেক রকম আলোকসজ্জা দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই মণ্ডপে। আলোর কারিকুরিতে থাকছে গানের স্বরলিপিও। তাদের মণ্ডপে উঠে এসেছে এক টুকরো আফ্রিকা। উদ্যোক্তাদের দাবি, ওই দেশে বিভিন্ন বাড়িতে যেমন কারুশিল্প থাকে, সেই আদলেই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। মণ্ডপ জুড়ে মানবের মূর্তি। তার কোনওটির মাথায় বাঘ। কোনওটির মাথায় পেঁচা।
কোলা ঐক্য সম্মিলনীর মণ্ডপ তৈরি হয়েছে বৃন্দাবন্দের মন্দিরের আদলে। কৃষ্ণ ভাবনায় মজেছে জয়পুর সবুজ সঙ্ঘের পুজো প্রাঙ্গণও। ভেড়িকুঠি নেতাজি সঙ্ঘ, স্টেশন রোডে অগ্রগামী সঙ্ঘ, নতুনগ্রাম নেতাজি সঙ্ঘ, সোনালি সঙ্ঘ, বাগাটি বন্ধুমহল ক্লাবের মণ্ডপও নজর কাড়েছে দর্শনার্থীদের।
পুজো ভাবনায় পরিবেশের বার্তা দিচ্ছে প্রিয় সমিতি। তাদের থিমের নাম — ‘জীবিত ও মৃত’। মণ্ডপসজ্জায় প্রচুর বাঁশগাছ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে আম, কাঁঠাল, বাহারি নানা গাছ। কোনওটি মাটিতে বসানো, কোনওটি টবে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, একটি গাছ যেমন জীবন্ত অবস্থায় অক্সিজেন, ছায়া দিয়ে জীবকূলকে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি মৃত্যুর পরেও শিল্পকর্ম-সহ নানা কাজে তাকে ব্যবহার করা যায়। তাই গাছ লাগানো এবং তাকে বাঁচানোর আর্জি জানানো হয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ এবং জল সংরক্ষণের বার্তা দেওয়া হচ্ছে মাইকে। সবুজায়নের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দেবীর শাড়িও সবুজ। এর পাশাপাশি বঙ্গসন্তানের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে দেবীর দু’পাশে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মডেল বসানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy