Advertisement
E-Paper

টানা ন’বছর স্বামীর খোঁজ চালিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রী

হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা যূথিকার স্বামী প্রসেনজিৎ আটা গত ২০১০ সালের ২৮ মে হাওড়া-কুরলাগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। দুর্ঘটনাস্থল এবং স্থানীয় সব ক’টি হাসপাতালে স্বামীর খোঁজে ঘুরতে থাকেন যূথিকা। কিন্তু কোথাও স্বামীর খোঁজ মেলেনি বলে তাঁর দাবি।

অসুস্থ: বাড়িতে যূথিকা আটা। সোমবার, সালকিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

অসুস্থ: বাড়িতে যূথিকা আটা। সোমবার, সালকিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০২:৩৯
Share
Save

স্বামী জীবিত না মৃত— এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে পেরিয়ে গিয়েছে ন’বছর। কিন্তু প্রশাসন কিংবা রেলের কাছ থেকে কোনও উত্তর মেলেনি। সেই উত্তরের খোঁজ করতে করতে এ বার নিজেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লেন যূথিকা আটা।

হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা যূথিকার স্বামী প্রসেনজিৎ আটা গত ২০১০ সালের ২৮ মে হাওড়া-কুরলাগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। দুর্ঘটনাস্থল এবং স্থানীয় সব ক’টি হাসপাতালে স্বামীর খোঁজে ঘুরতে থাকেন যূথিকা। কিন্তু কোথাও স্বামীর খোঁজ মেলেনি বলে তাঁর দাবি। যে কয়েক জনের দেহাংশ দুর্ঘটনাস্থল থেকে মেলে, তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষা করেও শনাক্ত করা যায়নি সেই দেহ। তার পর থেকে রেল, প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন যূথিকা। কিন্তু শুধুমাত্র ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়া কিছুই পাননি তিনি। সরকারি খাতায় তাঁর স্বামী ‘নিখোঁজ’, ফলে মেলেনি বিমা এবং ব্যাঙ্কের জমানো টাকাও। শেষে ছোট্ট মেয়ে আর বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চালাতে বালির একটি অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান তিনি। মাসিক চার হাজার টাকার সেই চাকরি করেই মেয়ের পড়াশোনা এবং সংসার চালাচ্ছিলেন যূথিকা। কিন্তু চলতি বছরের ২৮ মার্চ স্কুল চলাকালীন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। সহকর্মীরাই হাওড়া জয়সওয়াল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যখন ভর্তি করেন তাঁকে, তত ক্ষণে তাঁর ডান দিক পুরো অসাড় হয়ে গিয়েছে। সে দিনই তাঁকে পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হয়েছে। অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁকে অন্যত্র ভর্তি করতে হবে।

সেইমতো পার্ক সার্কাসের চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি একটু সুস্থ হলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আস্তে আস্তে একটু সুস্থও হয়ে ওঠেন। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হতে গেলে

হাসপাতালে আরও কয়েক মাস থাকতে হত। কিন্তু এমন কেউ নেই যে, তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে থাকতে পারতেন। ফলে সাময়িক সুস্থতার পরেই বাড়ি ফিরে আসেন যূথিকা। আপাতত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী তিনি। অসুস্থতার জন্য অঙ্গনওয়াড়ির চাকরিটাও আর নেই। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেতন। এই অবস্থায় সংসার চলবে কী করে আর মেয়ের পড়াশোনাই বা কী ভাবে

করাবেন, তা ভেবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যূথিকা। তবে শুধু যূথিকা আটা নয়, এই পরিস্থিতিতে রয়েছে রাজেশ ভাটরা-সহ আরও ষোলো জনের পরিবার। ওই দিনের দুর্ঘটনায় একসঙ্গে স্ত্রী, পুত্র ও মেয়েকে হারিয়েছিলেন রাজেশ ভাটরা। স্ত্রী এবং ছেলের দেহ মিললেও গত ন’বছর ধরে মেয়ের দেহ মেলেনি। মেলেনি কোনও খোঁজ। রাজেশ এবং

যূথিকা জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া জখম এবং নিহতদের দেহের যা অবস্থা ছিল, তা থেকে আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে কেউ বেঁচে নেই। যে কয়েকটি হাসপাতালে জখমদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সব ক’টিতেই আমরা হন্যে হয়ে খুঁজেছিলাম। কিন্তু পাইনি। আর বাকি দেহগুলি দলা পাকিয়ে গিয়েছিল। ফলে প্রথম দিকে কার দেহ কে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা কেউই জানেন না। যূথিকার অভিযোগ, ‘‘না মিলছে খোঁজ, না ডেথ

সার্টিফিকেট। তার উপরে আমি এই অবস্থায় পড়ে। জানি না এ বার খেতে পাব কি না। মেয়ের পড়া তো দূর অস্ত্‌।’’ যদিও রাজেশ জানিয়েছেন, রেল-ট্রাইব্যুনালে তিনি অভিযোগ জানাতে সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার পরে এক বছর কেটে গেলেও কিছু মেলেনি।

Jnaneswari Express derailment Woman Howrah Paralysis

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।