সাজাপ্রাপ্ত: আদালতে সীতা রাজভড়। —নিজস্ব চিত্র
ভাশুরের ১২ বছরের মেয়ের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারায় কাকিমাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত। বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (স্পেশাল কোর্ট) এই সাজা ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির বাবা মুন্না রাজভড় বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির রোডের বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর আগে রোগে আক্রান্ত হয়ে মুন্নাবাবুর স্ত্রী মারা যান। যৌথ পরিবার হওয়ায় তাঁর মেয়ে দাদু, ঠাকুমা ও কাকু, কাকিমার কাছেই মানুষ হয়। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মুন্নাবাবু মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে জুটমিলে কাজে বেরিয়ে যান। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ মুন্নাবাবুর মেয়ে স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে আসার পর তার কাকা সুনীলবাবুর স্ত্রী সীতা রাজভড় তাকে নিজের ঘরে আটকে চুরির অপবাদে মারধর শুরু করে। মুন্নাবাবুর মেয়ে বাইরে আসার চেষ্টা করলে ওকে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা হয়। বিকেলের দিকে পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে সীতাও বাইরে বেরিয়েছিল। সাড়ে ৫টা নাগাদ সীতা বাড়ি ফিরে আসে। ফাঁকা বাড়ি পেয়ে সীতা মুন্নাবাবুর মেয়ের গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় মেয়েটি আর্তনাদ করতে শুরু করে। ওর চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। জানালা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। ঘরের দরজা খুলতেই নজরে আসে মেয়েটি অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। তারা সঙ্গে সঙ্গে মুন্নাবাবুকে ফোনে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে মেয়েটিকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে ভর্তি হলেও ওর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই মেয়েটিকে কলকাতার মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট ওর মৃত্যু হয়। এরপর মুন্নাবাবু তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী সীতার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সীতাকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে সীতা জেল হেফাজতে ছিল। ৫ বছর মামলার শুনানি চলার পর মৃত কিশোরীর বাবা, কাকা সহ মোট ষোলো জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত বুধবার চুঁচুড়া আদালত সীতা রাজভড়কে দোষী সাব্যস্ত করে। এই মামলার সরকারি পক্ষের আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (স্পেশাল কোর্ট) অনুপম মাইতির এজলাসে সীতাকে হাজির করা হয়। বিচারক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগে সীতা রাজভড়কে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১০,০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৪ মাসের কারাবাসের নির্দেশ দেন।’’
মৃত কিশোরীর বাবা মুন্না রাজভড় বলেন, ‘‘স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের উপর বিশ্বাস করেই মা মরা মেয়েটাকে মানুষ করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আমার মেয়ে ওর কাকিমাকে মায়ের মতোই ভালবাসত। কিন্তু সে যে এতটা পাশবিক হয়ে উঠবে, কখনও ভাবতে পারিনি। এই অমানবিক কাজের উপযুক্ত সাজাই হয়েছে। কিন্তু স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আমি যে কষ্ট পাচ্ছি কোনও বাবা যেন এই কষ্ট না পায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy