দোষী: রায়ের পর সুস্মিতাকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র
বাগনানের এনডি ব্লকের নবম শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা দত্তকে খুনে দোষী সুস্মিতা মণ্ডলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। দোষীদের আড়াল করার দায়ে তার স্বামী মহীতোষের এক বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২) রতনকুমার দাস দোষীদের ওই সাজা শোনান। বুধবারই তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই মামলায় আর এক অভিযুক্ত দম্পতির ছেলে। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই রাতে খুনের সময়ে সে নাবালক ছিল। তার বিচার চলছে লিলুয়ায় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে।
এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন ঈশিতার বাবা বিমল দত্ত। সুস্মিতার সাজা শুনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করলেও মহীতোষের ক্ষেত্রে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘যে জঘন্য অপরাধ সুস্মিতা করেছে, তাতে আমরা তার মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলাম। তবুও মহামান্য আদালত তাকে যে শাস্তি দিয়েছে, তাতে আমরা খুশি। মহীতোষ শুধু অপরাধীদের আড়াল করেনি, সে এই খুনের চক্রান্তে পুরোপুরি জড়িত ছিল। তদন্ত চলাকালীন তার সব প্রমাণ পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। আদালতের সামনে পুলিশ তা যথাযথ পেশ করেনি বলে আমাদের অনুমান।’’ বিমলবাবুর আইনজীবী ত্রিদিবেশ নন্দ জানান, মহীতোষের শাস্তি বাড়ানোর জন্য তাঁরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন।
এ দিন আদালতে সাজা ঘোষণা হয় বেলা ১টা নাগাদ। পুলিশ তার আগেই সুস্মিতা এবং মহীতোষকে কোর্ট লকআপে হাজির করে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সাজা ঘোষণার আগে বিচারক সুস্মিতাকে বলেন, ‘‘যে অপরাধ আপনি করেছেন, তাতে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন হতে পারে। আপনার এ ব্যাপারে কী বক্তব্য আছে জানান।’’ বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে সুস্মিতা সব দায় ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘যা করার ছেলে করেছে। আমি কিছু জানি না।’’ বুধবার সুস্মিতাকে দোষী সাব্যস্ত করার সময়েও সে বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে একই কথা জানিয়েছিল।
দোষীদের আড়াল করার জন্য মহীতোষও যে শাস্তির মুখে পড়তে চলেছে জানিয়ে তার বক্তব্যও জানতে চান বিচারক। মহীতোষও অপরাধ অস্বীকার করে। তারপরেই বিচারক দু’জনের সাজা ঘোষণা করেন। রায় শোনার পরে সুস্মিতাকে ভাবলেশহীন থাকতে দেখা গেলেও মহীতোষ কেঁদে ফেলে।
এই মামলার রায় নিয়ে অনেকের মধ্যে আগ্রহ ছিল। এ দিন এজলাস ছিল ভিড়ে ঠাসা। আইনজীবীদের ভিড় ছাড়াও হাজির ছিলেন বহু সাধারণ মানুষ। খুনের ঘটনাটি ঘটে বাগনানেরই নবাসন গ্রামে। সেখানে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত সুস্মিতা ও তার ছেলে। সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ি শ্যামপুরের ঝুমঝুমিতে। মহীতোষ ইলাহাবাদে একটি সোনার দোকানে কাজ করত। তবে ঘটনার কয়েকদিন আগে সে কলকাতায় এসে একটি দোকানে কাজ শুরু করে। সেখানেই থাকত। পুলিশ জানিয়েছে, সুস্মিতার ছেলে এনডি ব্লকে একটি ফোটোকপির দোকানে কাজ করত। সেখানেই তার সঙ্গে ঈশিতার আলাপ হয়। সেই সূত্রে সুস্মিতার সঙ্গে পরিচয় হয় ঈশিতার। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই বিকেলে টিউশন নেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি ঈশিতা। পরের দিন সুস্মিতাদের ভাড়াঘর থেকে ঈশিতার দেহ মেলে। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই নাবালকের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে খুন হয় ঈশিতা। সেই সময় সুস্মিতা এবং তার ছেলেকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ২ অগস্ট চেন্নাই থেকে সুস্মিতা, তার ছেলে এবং মহীতোষকে গ্রেফতার করা হয়। মহীতোষই দু’জনকে আড়াল করতে তাদের চেন্নাই নিয়ে চলে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy