Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Murder

বাগনানের নবম শ্রেণির ছাত্রী খুনে দোষী মহিলা

মামলায় তৃতীয় অভিযুক্ত দম্পতির ছেলে। নাবালক হওয়ায় তার বিচার চলছে লিলুয়া হোমের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

বছর দুয়েক আগে বাগনানের এনডি ব্লকের নবম শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা দত্ত খুন হয়েছিল নবাসন এলাকার একটি ভাড়াঘরে। ওই ভাড়াঘরের চেয়ারের নীচ থেকে ছাত্রীটির দেহ মিলেছিল। তার মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথা ঢাকা ছিল চটের বস্তায়। পা দু’টি নাইলনের দড়িতে বাঁধা ছিল। এলাকায় তোলপাড় ফেলা এই খুনে দোষী সাব্যস্ত হল এক মহিলা। সেই সময় ঘরটি যে ভাড়া নিয়েছিল। অপরাধ আড়াল করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তার স্বামীও। মামলায় তৃতীয় অভিযুক্ত দম্পতির ছেলে। নাবালক হওয়ায় তার বিচার চলছে লিলুয়া হোমের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে।

বুধবার সুস্মিতা মণ্ডল নামে ওই মহিলা ও তার স্বামী মহীতোষকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (২) রতনকুমার দাস দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ, বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা হবে। ওই নাবালকের সঙ্গে ঈশিতার সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই খুন বলে চার্জশিটে দাবি করেছে পুলিশ। ঈশিতার মা মিঠুদেবী অবশ্য মেয়ের কোনও সম্পর্কের কথা প্রথম থেকেই মানতে চাননি। এই মামলার মোট ১৭ জন সাক্ষী ছিলেন। শুনানি চলাকালীন সুস্মিতা আদালতে খুনের সব দায় ছেলের উপরে চাপিয়ে দেয়। বিচারক তা খারিজ করে দেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই রাতে। ঈশিতাকে ওইদিন বিকেলে সুস্মিতা নবাসনে তার ভাড়াবাড়িতে ডেকে পাঠায়। মহিলার ছেলে নবম শ্রেণির পরে পড়া ছেড়ে এনডি ব্লকেই একটি ফটোকপির দোকানে কাজ করত। সেখান থেকেই ঈশিতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সুবাদেই ঈশিতাকে চিনত সুস্মিতা। টিউশন নিতে যাওয়ার নাম করে সে দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঈশিতা ওই মহিলার সঙ্গে তার বাড়িতে চলে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়ে না-ফেরায় ঈশিতার মা মিঠুদেবী খোঁজখবর শুরু করেন। লোকমুখে তিনি জানতে পারেন, সুস্মিতার সঙ্গে ঈশিতাকে যেতে দেখা গিয়েছে। তখন তিনি ফোন করলে সুস্মিতা জানায়, ঈশিতা তার বাড়িতেই আছে। মেয়েকে দ্রুত বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মিঠুদেবী ওই মহিলাকে বলেন। কিন্তু রাত আটটা পর্যন্ত ঈশিতা না-ফেরায় মিঠুদেবী স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে নবাসনে ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ঘরে তালা। তাঁরা সেখান থেকেই সুস্মিতাকে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। তখন তাঁরা বাগনান থানায় বিষয়টি জানান।

সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ি শ্যামপুরের ঝুমঝুমিতে। কিন্তু তারা সেখানে থাকত না। সুস্মিতার স্বামী ইলাহাবাদে সোনার কাজ করত। নবাসনে ভাড়াবাড়িতে সুস্মিতা ছেলেকে নিয়ে থাকত। ২৬ জুলাই সকালে ভাড়াবাড়ির মালিক ফোন করে ঈশিতার মাকে জানান, ওই ঘরের খোলা জানালা দিয়ে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারের নীচে ঈশিতার রক্তাক্ত দেহের অংশ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। ঈশিতার বাবা-মা নবাসনে চলে আসেন। তার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল পুলিশ। ভাড়াঘরের দরজার তালা ভেঙে ঢুকে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। মিঠুদেবী মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন সুস্মিতা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সুস্মিতা এবং তার ছেলে মিলে ঈশিতাকে খুন করে। তারপরে চলে যায় ইলাহাবাদে। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে মহীতোষ স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ইলাহাবাদ থেকে চেন্নাইয়ে চলে যায়। কিন্তু মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ওই বছরের ২ অগস্ট পুলিশ চেন্নাইয়ের কাঞ্চিপুরমের একটি হোটেল থেকে তিন জনকে ধরে ফেলে। চার্জশিটে সুস্মিতার স্বামীকে পুলিশ সরাসরি খুনে অভিযুক্ত করেনি। অভিযুক্তদের আড়াল করা এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিন মাসের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দিয়ে দেয়। এর স্বামী এবং ছেলে জামিন পেলেও সুস্মিতা পায়ন‌ি। জেল হেফাজতে রেখেই তার বিচার হয়। বুধবার অবশ্য পুলিশ মহীতোষকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy