অকেজো: স্কুলের ছাদে সোলার প্যানেল। —নিজস্ব চিত্র
পরিবেশ-বান্ধব আলোর জন্য ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে শহরের ৪২টি স্কুলের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে দু’বছর আগে। কিন্তু সেই আলো আজও কোথাও জ্বলেনি।
খাতায়-কলমে শহরের আটটি ফুটবল মাঠ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মাঠকেই মনে হবে খাটাল।
৪০০ পথবাতি এবং ৪০টি ফ্লাড-লাইট বসেছে শহরে। কিন্তু প্রায় ৮০ শতাংশই বিকল।
১০ হাজার বৃক্ষরোপণেরও কোনও চিহ্ন নেই।
আরামবাগকে ‘গ্রিন সিটি’ হিসেবে গড়তে বরাদ্দ হয়েছে ১৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। কিন্তু ওই টাকায় কাজের বহর দেখে পুরসভার কর্তাদের বিরুদ্ধে শহরে কান পাতলেই শোনা যায় টিপ্পনী। ওই প্রকল্পে শহরের মোট ১৯টি ওয়ার্ড থেকেই দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্ত রায় নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এই পুরবোর্ড গ্রিন সিটি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করেছে, তা পরিষ্কার। লোকের চোখে ধুলো দিতে খালি প্রসাধন সামগ্রীর মতো কিছু সরঞ্জামে শহর সাজানো হয়েছে। হাইমাস্টের স্তম্ভ আছে, আলো নেই। সোলার চ্যানেল বসানো হয়েছে, কিন্তু সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়নি। কয়েকটি এঁদো পুকুরের পাড় বাঁধাই হয়েছে। কিন্তু পুকুর সংস্কার হয়নি। সেগুলিতে মশা আর জঞ্জালের আড়ত যেমন ছিল, তেমনই আছে।”
কোর্ট সংলগ্ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ মনসুরের অভিযোগ, “আরামবাগের মতো অপরিচ্ছন্ন, ঘিঞ্জি শহরে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা খুব জরুরি ছিল। কোটি কোটি টাকার কী কাজ হচ্ছে মানুষ বুঝতে পারছেন না। সৌরবিদ্যুৎ, রাস্তায় এলইডি আলো, বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি বসানো ইত্যাদি নানা গালভরা কাজ হয়েছে। কিন্তু তা থেকে সুফল মেলেনি। ঠিকাদারদের সঙ্গে জোট বেঁধে কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে।”
শুধু কী সাধারণ মানুষের অভিযোগ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলরও বলছেন, ‘‘চেয়ারম্যান সার্বিক পরিকল্পনা করে কাজ করেননি। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে পরিকল্পনা চাওয়া হয়নি। না হলে ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পে যা বরাদ্দ হয়েছে, তাতে শহরের ভোলই বদলে যেত।”
পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী এ সব অভিযোগকে আমল দিচ্ছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। ওয়ার্ড ভিত্তিক উন্নয়নকে মাথায় রেখে সব কাউন্সিলরদের নিয়ে পরিকল্পনাও হয়েছে। কোথাও কোনও অসঙ্গতি নেই। বড় পরিসরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনুমোদন পেলেই দফায় দফায় সব ক’টিতেই ইউনিট থেকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সম্প্রতি তিনটি ক্ষেত্রে অনুমোদনও মিলেছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের মে মাসের শেষে আরামবাগ পুরসভা ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের আওতায় আসে। পুর কর্তৃপক্ষ মাসখানেক ধরে সমীক্ষা করে রিপোর্ট পাঠালে অগস্ট মাস নাগাদ মোট ১৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা অনুমোদন করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। দু’কোটি টাকার কাজ এখনও বাকি আছে। যে সব কাজ হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ৪২টি স্কুলে সোলার প্যানেল, ৮টি ফুটবল মাঠ সংস্কার, ৪০০টি পথবাতি, ৪০টি ফ্লাডলাইট, একটি পার্কিং প্লেস তৈরি, ১০টি পুকুর পাড় শালবল্লা দিয়ে বাঁধাই,
১০ হাজার বৃক্ষরোপণ, ১০০টি সিসিটিভি ইত্যাদি। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌর চ্যানেল ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসেই বসানো হয়ে যায় সব স্কুলের ছাদে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy