পেটে কিল মেরে দিন চলছে বিড়ি শ্রমিকদের।
প্রথমে জনতা-কার্ফু। তার পরে লকডাউন। আমাদের কাজ সেই যে বন্ধ হল, এখনও চালুর নামগন্ধ নেই।
আমার পড়াশোনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ছেলেবেলাতেই বাপের বাড়িতে বিড়ি বাঁধা শেখা। ১৬-১৭ বছর বয়সে বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে আসার পর থেকেই বিড়ি বেঁধে চলেছি। প্রায় ৩০ বছর এই কাজ করছি। এক হাজার বিড়ি বাঁধলে ১৪০ টাকা মেলে। সংসারের কাজকর্ম করে দিনে ৫০০-৬০০ বিড়ি বাঁধতে পারি। অর্থাৎ, সারা দিনের রোজগার ৭০-৮০ টাকা। এইটুকু টাকাও যে কত, আমরা বুঝি। এখন তো আরও বেশি করে বুঝতে পারছি।
খানাকুল বাজারের কাছে আমাদের বাড়ি। বাজারের দোকান থেকে বিড়ির পাতা-মশলা আসে। কিন্তু দোকান তো খুলছে না। তাই, পাতা-মশলার জোগান নেই। আমাদের কাজও নেই। আমার তিন ছেলেমেয়ে। ১০ বছর ধরে স্বামী অন্যত্র থাকেন। ছ’বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। দুই জোয়ান ছেলেকে নিয়ে সরকারি প্রকল্পের ঘরে থাকি। শাশুড়ি এখন আমাদের ঘরে আছেন। ছেলেরা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। করোনাভাইরাসের জন্য নির্মাণকাজও বন্ধ। তাই ছেলেরাও এখন বসা। ফলে, আমাদের দিন গুজরান করা মুশকিল হয়ে গিয়েছে। আমাদের মতো ঘরে কত টাকা আর গচ্ছিত থাকে? যে টুকু থাকে, তা শেষ হতেই বা কতক্ষণ লাগে? অতএব জমানো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
রেশন থেকে মাথাপিছু দু’কেজি করে চাল পেয়েছি। এক আত্মীয় কয়েক দিন আগে ৫ কেজি আলু দিয়েছেন। বেশির ভাগ দিন দুপুরে আলুসেদ্ধ-ভাত খাচ্ছি। সঙ্গে একটু তেল আর কাঁচালঙ্কা। কোনও দিন ফ্যান-ভাত। রেশনের চালের কিছুটা দিয়ে মুড়ি ভেজেছি। কোনও দিন রাতে মুড়ি-জল দিয়েও চলে যাচ্ছে। জনধন প্রকল্পে ৫০০ টাকা পেয়েছি। রান্নার একটা গ্যাসও পেয়েছি বিনা পয়সায়। কিন্তু তা দিয়ে অভাব কতটা মেটে?
বাড়িতে শুয়ে-বসে দিন কাটছে। কিন্তু আমরা কি এই ভাবে দিন কাটানোর লোক! লড়াই করে আমাদের সংসার চলে। অথচ, এখন লড়াই করার পরিস্থিতিও নেই। শুধু উপরওয়ালাকে ডাকছি। দোয়া চাইছি, এই ভাইরাস যেন মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে সব মানুষের রোজগারের রাস্তা খুলে যায়।
পেটে কিল মেরে থাকা বলতে যা বোঝায়, আমাদের এখন সেই অবস্থা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy