Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Dhaniakhali Saree

কোটি টাকার শাড়ি জমে ধনেখালির গুদামে

বিপণনের সমস্যার কথা মানছেন হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিকরা।

ফাঁকা: খদ্দেরের দেখা নেই। ধনেখালির একটি দোকানে। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: খদ্দেরের দেখা নেই। ধনেখালির একটি দোকানে। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
ধনেখালি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৫:১৬
Share: Save:

শাড়িতে ঠাসা ধনেখালির তন্তুবায় সমবায় সমিতির গুদাম। সেলস কাউন্টারও ভর্তি। টেকসই আর পাকা রঙের ধনেখালি তাঁতের শাড়ি বঙ্গনারীর অঙ্গশোভায় উপরের সারিতে ছিল এক সময়। সেই কদর কমেছে। নানা কারণে বেহাল শিল্প করোনা পরিস্থিতিতে আরও গাড্ডায়। বিক্রিবাট্টা নেই। তাই অর্থের আমদানিও নেই। এ দিকে শাড়ি জমছেই। ফলত সমবায় সমিতির হাত ধরে বেঁচে থাকার লড়াই লড়ছে এখানকার তাঁতশিল্প। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কত দিন লড়াই চলবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিপণনের সমস্যার কথা মানছেন হ্যান্ডলুম দফতরের আধিকারিকরা। জেলার হ্যান্ডলুম ডেভেলপমেন্ট অফিসার কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শাড়ি কেনার ব্যাপারে তন্তুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’

ধনেখালিতে সোমসপুর ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ উইভার্স সোসাইটি লিমিটেড, ধনিয়াখালি ইউনিয়ন তাঁতশিল্পী সমবায় সমিতি লিমিটেড, গুড়াপ তন্তুবায় সমবায় সমিতি লিমিটেডের অধিনে কয়েকশো তাঁতি রয়েছেন। সমিতি তাঁতিকে সুতো দেয়। শাড়ি বুনে তাঁতি সমিতিকে দেন। বিনিময়ে মজুরি মেলে। লকডাউনে বাজার-হাট বন্ধ থাকার প্রভাবে এপ্রিলে চৈত্র সেলের সময় থেকে গুদাম উপছে যেতে শুরু করে। সমবায়ের কর্তারা জানান, ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে কারবার চলে। লেনদেন বন্ধ থাকলেও সুদ গুণতে হচ্ছে। মজুত টাকা থেকে সুতো, রং কিনে তাঁতিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। সোমসপুরের সমবায়টির ম্যানেজার বিনয়ভূষণ লাহা বলেন, ‘‘যতক্ষণ সম্ভব কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু পুঁজি ফুরিয়ে গেলে কী হবে? পুজোর শাড়ি তোলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়। ভিন্ রাজ্যে শাড়ি যায়। এ বার হাত গুটিয়ে বসে আছি।’’

ওই সমবায়ের হিসেব, ১৩-১৪ হাজার শাড়ি জমে গিয়েছে। টাকার অঙ্কে প্রায় পঁচাত্তর লক্ষ। মন্দার বাজারে এত শাড়ি কবে বিক্রি হবে, কেউ জানে না। বিনয়ের কথায়, ‘‘এমনিতেই হরেক সমস্যা। তার উপরে লকডাউন সর্বনাশ করে ছাড়ছে। এমন চললে হয়তো ধনেখালি তাঁত ইতিহাস হয়ে যাবে।’’ স্থানীয় বৃন্দাবনপুর গ্রামের মুরারিমোহন দাস বালুচরি বোনেন। অভিজ্ঞ তাঁতির গলায় শঙ্কার কাঁটা খচখচ করে, ‘‘বাজার নেই। সমিতিতে আছি বলে টিকে আছি। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন!’’

গুড়াপের সমবায়েও কয়েক হাজার শাড়ি জমে। ম্যানেজার যামিনীরঞ্জন গুঁই বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সমবায়ের ২০ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপো‌জ়িট ভেঙে চলছে। এটা শেষ হলে টাকা জোগাড়ের আর রাস্তা নেই। তখন তাঁতি থেকে বেতনভুক কর্মী, সবাই কাজ হারাব।’’ তাঁর ক্ষোভ, একটা সময় তন্তুজ সব শাড়ি কিনত। এখন কিছুটা কেনে। কিন্তু এ বার উচ্চবাচ্য করেনি। যামিনী বলেন, ‘‘ওদের দিকে মুখিয়ে থাকি। দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াবে না! এ ভাবে চললে শিল্প বাঁচবে!’’ সরকারি অন্য সংস্থাও চুপ। সমিতির সম্পাদক তথা তাঁতশিল্পী রাজকুমার গুঁই বলেন, ‘‘সমিতির জন্য টিকে আছি। যাঁরা মহাজনের মাধ্যমে কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই বসে গিয়েছেন।’’ গুড়বাড়ি-১ পঞ্চায়েতের বালিডাঙা গ্রামের তাঁতি রতন দাসেরও একই বক্তব্য। সমস্যার বারোমাস্যায় জর্জরিত তাঁতি জানান, মেয়েদের মধ্যে শাড়ি পরার প্রবণতা কমছে। তার উপরে যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে অসম লড়াই। অদূর অতীতে নোটবন্দি থেকে জিএসটির ধাক্কা। এ বার লকডাউনের ছোবল। শত প্রতিবন্ধকতায় মাকুর শব্দ কী চিরতরে হারিয়ে যাবে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy