—ফাইল চিত্র।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ডায়াবিটিস রোগীদের শরীরে করোনাভাইরাস সহজে থাবা বসাতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। অথচ, ডায়াবিটিস রোগীদের অন্যতম জরুরি ওষুধ ইনসুলিনের জোগান কমছে দুই জেলাতেই। ফলে, ওই রোগীদের উদ্বেগ বাড়ছে।
ইনসুলিন কিনতে গিয়ে কোনও রোগীকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে, কেউ ফিরছেন নামমাত্র ওষুধ কিনে। কবে জোগান স্বাভাবিক হবে কেউ জানেন না। ওষুধ ব্যবসায়ীদের রাজ্য সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ) নামে ওই সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি স্বপন শেঠ বলেন, “ইনসুলিনের সঙ্কট ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। এ রাজ্যে ইনসুলিন তৈরি হয় না। মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি, বাইরের রাজ্য থেকে ইনসুলিন যাতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আসে, সেই ব্যবস্থা করতে। জরুরি ভিত্তিতে উড়ানে আসা দরকার। ওষুধ প্রস্তুতকার সংস্থার ঘরে এখনও কিছু মাল আছে। লকডাউনে আসতে পারছে না।”
চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, লকডাউনে পরিবহণ সমস্যা বাজারে ইনসুলিন জোগান কমার অন্যতম কারণ। তা ছাড়া, ওই ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ভিন্ দেশ থেকেও আসতে পারছে না। পাশাপাশি, এক শ্রেণির ডায়াবিটিস রোগীও লকডাউনে ভয়ে বেশি পরিমাণ ওই ওষুধ কিনে নিয়েছেন আগেই। ওষুধ নির্দিষ্ট মাত্রায় উৎপাদন হয়। কোনও সংস্থা চাইলেই খুশি মতো উৎপাদন করে নিতে পারে না। চাহিদার সঙ্গে জোগানের সমতা না-থাকায় বাজারে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলেও মনে করছেন কোনও কোনও চিকিৎসক।
বহু রোগী আছেন, যাঁদের দিনে একাধিকবার ইনসুলিন নিতে হয়। বাজারে এ ভাবে জোগান কমলে তাঁরা সঙ্কটে পড়বেন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস জানান, ইনসুলিন-নির্ভর রোগীদের অন্য কোনও বিকল্প ওষুধ নেই। কোনও ডায়াবিটিস রোগী যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তা হলে তাঁর কিডনি নষ্টের আশঙ্কা থাকে। কারণ, ওই ভাইরাস ফুসফুস ছাড়াও কিডনিতে প্রভাব ফেলে। কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ওই ওষুধ না-পাওয়া গেলে ইনসুলিন-নির্ভর রোগীদের অবস্থার অবনতি হয়ে যকৃৎ-হৃদ্যন্ত্র বিকল, এমনকি ব্রেন-স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে।
বিসিডিএ সূত্রের খবর, এ রাজ্যে হিমাচলপ্রদেশ, মুম্বই, গুজরাত-সহ কয়েকটি রাজ্য থেকে ইনসুলিন আসে। আগামী সপ্তাহে কিছু ওষুধ আসবে
বলে সংস্থার কর্তারা মনে করছেন। তাঁদের দাবি, দোকানগুলিতে কাউকে সাত দিনের বেশি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
কী শহর, কী গ্রাম— ইনসুলিনের অভাবের ছবিটা সর্বত্রই এক রকম। রিষড়ার লক্ষ্মীপল্লির ডায়াবিটিস রোগী সাধনা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি দিনে তিন বার ইনসুলিন নিই। যখনই শুনলাম ইঞ্জেকশনে টান আছে, কিছু বেশি পরিমাণে কিনে নিয়েছি। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ যে ভাবে বাড়ছে, জানি না এরপরে ওষুধ পাব কিনা!’’
আরামবাগ শহরে ১৩৫টি ওষুধের দোকান আছে। হাসপাতাল রোডের ওষুধ ব্যবসায়ী বিজয় বসু জানান, তাঁদের কাছে ইনসুলিনের জোগান আছে বড়জোর চার দিনের। একই সমস্যার কথা জানান উলুবেড়িয়া, বাগনান, নুন্টিয়া-সহ গ্রামীণ হওয়ার অনেক ওষুধ ব্যবসায়ীও। বাগনানের এক ডিস্ট্রিবিউটর বলেন, ‘‘কলকাতায় যে সংস্থার থেকে ইনসুলিন নিই, তারা দিতে পারছে না। অল্প ওষুধ মজুত আছে।’’ নুন্টিয়ার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘যে ইনসুলিন আছে, তাতে আর দু’দিন চলবে।’’ জোগান ঠিক রাখতে নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছে হাওড়া জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy