প্রতীকী ছবি।
দলিল জাল করে জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ কম নয় হাওড়া জেলায়। রাজ্য ভূমি দফতরের নির্দেশমতো এ বার এই জেলায় জাল দলিলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
কী আছে নির্দেশিকায়?
ভূমি দফতর সূত্রের খবর, যদি কেউ তাঁর জমির দলিল জাল করে মিউটেশন করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ব্লক ভূমি দফতরে অভিযোগ জানান, তখন আধিকারিকরা যে দলিলের ভিত্তিতে মিউটেশন হয়েছে তার নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়ে বিষয়টির সত্যসত্য জানতে চাইবেন। যদি সাব-রেজিস্ট্রার জানান, জমিটি রেজিস্ট্রি করানো হয়নি এবং দলিলের নম্বর ভুয়ো, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক ভূমি আধিকারিক জাল দলিলের ভিত্তিতে করা মিউটেশন বাতিল করবেন এবং আগের মিউটেশন ফিরিয়ে দেবেন। যে বা যারা এই জাল দলিলের ভিত্তিতে মিউটেশন করিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্লক ভূমি আধিকারিককে।
জেলা ভূমি দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন নির্দেশিকা মোতাবেক প্রতিটি ব্লককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অনেক সময়ে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকে। সে ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীদের একাংশের সহায়তায় এমন ভাবে দলিল জাল করা হয় যে তা ধরা খুব কঠিন। তবে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়।
কেন এই ব্যবস্থা নিতে হল?
ভূমি দফতর সূত্রের খবর, কয়েক বছর ধরে জাল দলিলের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে প্রোমোটারি এবং কারখানার জন্য জমি নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দালালেরা। এক লপ্তে যখন অনেকটা জমি দরকার, তখন বিক্রেতাদের কেউ যদি জমি বিক্রি করতে নারাজ হন, তাঁদের দলিল জাল করে তার ভিত্তিতে মিউটেশন করিয়ে নেওয়া হয়। তারপরে পুলিশ এবং এক শ্রেণির নেতাদের সহায়তায় জমির দখল নিয়ে নেন কারখানা মালিক বা প্রোমোটার।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে ভোটার কার্ড নকল করে অন্য জনকে বিক্রেতা সাজিয়ে নিয়ে প্রতারণা করা হত। আসল মালিক জানতেও পারতেন না তাঁর জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন যে হেতু জমি কেনাবেচায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষের আধার কার্ডের নম্বর লাগে এবং সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে উভয় পক্ষকে হাজির হতে হয়, তাই ওই ভাবে প্রতারণা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন দলিল জাল করার প্রক্রিয়াটি হয় বাইরে থেকে। এর পিছনে একটি চক্র আছে। তারাই একজনকে রেজিস্ট্রার সাজিয়ে নকল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে জাল দলিল সই করিয়ে নেয়। সেই দলিলের ভিত্তিতে ব্লক ভূমি দফতর থেকে মিউটেশনও করানো হয়।
সাধারণত দলিল জাল হয় সেই সব জমির, যেখানে বিক্রেতারা মোট জমির কিছুটা বিক্রি করেছেন। অবিক্রিত বাকি জমিটিই নেওয়া হয় দলিল জাল করে। যে হেতু বিক্রেতা জমির কিছু অংশ আগেই বিক্রি করেছেন, তাই তাঁর আধার কার্ড, ছবি সব মিলে যায়। প্রযুক্তির সহায়তায় সেইসব ব্যবহার করেই বাকি জমিটির দলিল জাল করা হয়।
আগে এইসব ক্ষেত্রে অভিযোগ জানতে পেরে জেলা ভূমি দফতর মামলা করার পরামর্শ দিত প্রতারিতকে। সেই মামলার নিষ্পত্তি হতে সময় লাগত বছরের পর বছর। নতুন নির্দেশিকায় আগের নিয়ম রদ করা হয়েছে। ব্লক ভূমি আধিকারিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ধরণের অভিযোগের মীমাংসা তাঁদেরই করতে হবে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সাব-রেজিস্ট্রারকে চিঠি লিখে দলিলের সত্যতা জানতে চাইবেন। বাইরে বসে দলিল জাল করা গেলেও সেই দলিলে যে নম্বর ফেলা হয় তা আসলের সঙ্গে মিলবে না। ফলে, সাব-রেজিস্ট্রার সেই নম্বর মিলিয়ে দেখলেই ধরতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy