শ্রম দফতরের সামনে বিক্ষোভ শ্রমিকদের। নিজস্ব চিত্র
প্রথম বৈঠকে কোনও পক্ষই হাজির ছিল না। দ্বিতীয় বৈঠকে শ্রমিকপক্ষ এলেও গরহাজির রইল মালিকপক্ষ। ফলে, উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুর শিল্পতালুকের ওষুধ কারখানা খোলার জন্য ত্রিপাক্ষিক স্তরে আলোচনাই শুরু করা গেল না।
শ্রমিকদের অভিযোগ এবং মালিকপক্ষের পাল্টা অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনের জেরে গত ৩১ অগস্ট ওই কারখানায় ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস পড়েছিল। তারপর সমাধান সূত্রের খোঁজে আসরে নামে শ্রম দফতর। গত বুধবার শ্রমিক ও মালিক— দুই পক্ষকে বৈঠকে ডাকে শ্রম দফতর। সে দিন কোনও পক্ষই হাজির হয়নি। শুক্রবার ফের বৈঠক ডাকা হয়।
শ্রম দফতর সূত্রে খবর, এ দিন বৈঠকে মালিকপক্ষ আসেনি। শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্য প্রশাসনকে জানিয়ে এসেছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, করোনা-পরিস্থিতিতে তাঁদের কেউ বৈঠকে হাজির হতে পারবেন না। তবে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক হলে, তাতে যোগ দিতে তাঁদের অসুবিধা নেই।
শ্রমিকপক্ষের তরফে সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘৩১ অগস্ট রাতে শ্রম দফতরের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়, ১ সেপ্টেম্বরে বৈঠক হবে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কারণে বৈঠক স্থগিত রাখা হয়। বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর বৈঠক হবে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিই, ওই দিন বৈঠকে হাজির হওয়া যাবে না।’’
কারখানার ম্যানেজার বিশ্বদীপ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শ্রম দফতরের চিঠি পাওয়ার পরেই জানিয়ে দিয়েছিলাম, বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারব না। করোনা পরিস্থিতিতে এক সঙ্গে অনেকে বসে বৈঠক করা সম্ভব নয়। শ্রম দফতর যদি ভিডিয়ো কনফারেন্স করে, তবে তাতে উপস্থিত থাকা যেতে পারে।’’ তাঁর অভিযোগ ‘‘শ্রমিকেরা কারখানার গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা কারখানায় ঢুকতে পারছেন না। শ্রমিকেরা আগে তালা খুলে দিক। সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস তুলে নেব। শ্রমিকেরা আগে কাজে যোগ দিক। তারপর আলোচনায় বসা যাবে। কারখানা বন্ধ রেখে কোনও আলোচনা হবে না।’’
এ দিকে, মালিকপক্ষের এই দাবি মানতে নারাজ শ্রমিকেরা। তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষ আগে সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস তুলে নিক। তারপর তাঁরা কাজে যোগ দেবেন।
শ্রম দফতরের তরফে গোটা বিষয়টি দেখছেন শ্যামাপ্রসাদ কুণ্ডু নামে এক আধিকারিক। ঘটনাচক্রে, এ দিন আবার তাঁর বদলির নির্দেশ এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে, যখন আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে যে আধিকারিক আসছেন, তাঁকে বিষয়টি জানিয়ে যাচ্ছি। যদি দু’পক্ষ বৈঠকে আসত, তাহলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যেত। এ দিন কারখানার শ্রমিকেরা উলুবেড়িয়া শ্রম দফতরের সামনে গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখান। শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া মজুরি দিচ্ছেন না। অথচ, লকডাউন-এ জোর করে কাজ করিয়ে নিতে চাইছেন। কারখানার শ্রমিক সন্দীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু দিন ধরে বকেয়া টাকা মেটাচ্ছেন না। অথচ লকডাউনে জোর করে চাপ সৃষ্টি করে কাজ করাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষকে বলতে গেলেই ছাঁটাইয়ের হুমকি দিচ্ছেন।’’
শ্রমিকদের একাংশের দাবি, গত ২৮ অগস্ট তাঁদের দাবির কথা শ্রম দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। পক্ষান্তরে কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বেশ কিছু সময় ধরে নানা অছিলায় কাজে যোগ দিচ্ছিলেন না শ্রমিকেরা। এমনকী, ওষুধও বার করতে দিচ্ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়েই সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক-এর নোটিস ঝোলানো হয়েছে।
স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলেয়ে কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা ৪০। সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ঘোষণার পর থেকে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শ্রমিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy