এমনই হাল বেনারস রোডের। বুধবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর মজুমদার।
শেষ ঝেঁপে বৃষ্টি হয়েছিল নবমীর রাতে। কিন্তু তার পরে ১০ দিন কেটে গেলেও জল নামেনি হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকার বেনারস রোডে। এমনকী জল সরিয়ে রাস্তা মেরামত করার ব্যাপারে হাওড়া পুরসভার কোনও উদ্যোগই দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
বুধবার সকালে সেই জমা জল ও ভাঙাচোরা রাস্তার প্রতিবাদে এলাকার বাসিন্দারা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বেনারস রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। অবরোধে সামিল হয় স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারাও। টানা অবরোধের জেরে তীব্র যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহরের ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। পরে হাওড়া পুরসভার পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জল সরিয়ে রাস্তা সারানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ উঠে যায়।
কিন্তু প্রশ্ন হল, জমা জল সরাতে আগে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন?
হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন জমা জল সরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা সংশ্লিষ্ট দফতরের মেয়র পারিষদ ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে জানতে চেয়েছি। পাশাপাশি ওই এলাকায় জমা জলের সমস্যা মেটাতে কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’
বর্ষায় পুরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জল জমা নতুন কোনও কথা নয়। এ বছরও জল জমেছিল বিস্তীর্ণ এলাকায়। পুরসভার দাবি, গোটা এলাকাটি বেসিনের মতো হওয়ায় উঁচু এলাকার সমস্ত জল ওই ওয়ার্ডগুলিতে জমা হয়। প্রতি বছরই পাম্প বসিয়ে ওই জল বার করা হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, এ বছর পুজোর আগে বৃষ্টি থামায় ওই সময়ে ভাঙা ইটের টুকরো ও খোয়া ফেলে বেনারস রোডের ভাঙাচোরা অংশ প্রাথমিক ভাবে মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু পুজোর সময়ে ফের মুষলধারে বৃষ্টির পরে সম্প্রতি বেনারস রোড ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ভাঙা ইটের টুকরো উঠে গিয়ে জমা জলের নীচে থাকা ছোট-বড় গর্ত কার্যত মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় পড়ে গিয়ে আমাদের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী জখম হয়েছে। স্কুলে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। নিত্যদিন দুর্ঘটনা ঘটছে অথচ প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই।’’ অরিন্দম রায় নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ওই রাস্তায় গর্তে পড়ে অনেক যানবাহন উল্টে গিয়েছে। এমনকী হেঁটে যেতে গিয়েও অনেকে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন। অথচ পুরসভার কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’’
বেনারস রোডের যে অংশে রাস্তার এই হাল হয়েছে, সেটি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (উদ্যান) বিভাস হাজরা বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে দীর্ঘদিন জল জমে থাকার জন্য এলাকার বাসিন্দাদের ধৈর্য্যচ্যুতি হওয়ায় অবরোধ করেছেন। আমরাও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাম্প বসিয়ে জল সরানোর ব্যবস্থা করেছি।’’
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, জল না সরার অন্য একটি কারণ হল নিকাশির বেহাল দশা। তাঁদের অভিযোগ, বেনারস রোডের পাশে যে নিকাশি নালা রয়েছে, সেগুলি থেকে নিয়মিত পাঁক না তোলায় তার জল বহন ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে। তেমনি ওই এলাকার পাশেই ভাগাড় দিয়ে যাওয়া মূল নিকাশি নর্দমায় আবর্জনা পড়ে সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় জল বহন ক্ষমতা কমে গিয়েছে সেটিরও। ফলে জল বেরোতে না পেরে রাস্তায় জমে থাকছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেলগাছিয়া এলাকার জমা জল সরানোর জন্য কেএমডিএ-র একটি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। কিন্তু তা-ও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রায় অকেজো। পাঁচটি পাম্প থাকলেও চলে মাত্র একটি।
এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নিকাশির মূল সমস্যা হল ভাগাড়। সেখানে যে নিকাশি নালা রয়েছে, তার উপরে কয়েক মাস আগে ধস নামে। সেটি সারানোর কাজ চলছে। এ জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়াও কেএমডিএ-র যে পাম্পিং স্টেশন রয়েছে, সেটিকে আরও সক্রিয় করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পাশাপাশি নর্দমাগুলি থেকে পাঁক তোলার নির্দেশ দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy