Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

আরামবাগে অবাধে অপচয় জল

পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দীর সাফাই, “দফায় দফায় মাইকে প্রচার চলে। কিন্তু মানুষ জল নিয়ে সচেতন হচ্ছেন না।’’

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

রাস্তার ধারে কল থেকে অবিরাম জল পড়ে যাচ্ছে, কলের মুখ না থাকায় তা বন্ধ করার কোনও উপায় নেই। এমনই ছবি চোখে পড়ে আরামবাগ শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিশু উদ্যান সংলগ্ন রাস্তার ট্যাপে বহু বছর ধরে মুখ ছিল না। সম্প্রতি কলে মুখ বসানো হয়েছে। তবে বাকি জায়গায় ছবিটা এখনও বদলায়নি। জলের অনটন ও জল সংরক্ষণ নিয়ে দেশজুড়ে চর্চা চলছে। এইরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও জল অপচয় নিয়ে কোনও হেলদোল নেই আরামবাগ পুরসভার।

পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দীর সাফাই, “দফায় দফায় মাইকে প্রচার চলে। কিন্তু মানুষ জল নিয়ে সচেতন হচ্ছেন না।’’ যদিও শহরের সবক’টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরই অভিযোগ, “জল অপচয় নিয়ে মাইকে কোনও প্রচারই হয়নি এলাকায়।” উল্টে জল বাঁচাতে পুরসভার পরিকল্পনা এবং তদারকি নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

আরামবাগ পুরসভায় সারাদিনে পাঁচ দফায় মোট আট ঘণ্টা জল সরবরাহ করা হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য, সেই জলের প্রায় ৬০ শতাংশই অপচয় হয়। তাছাড়া অনেকেই চাষ-আবাদ, পুকুর ভরাট, গরুর গা ধোয়ানোর কাজেও পুরসভার সরবরাহ করা ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করেন। এলাকার বহু কলেরই মুখ নেই, কোথাও আবার মুখ থাকলেও ব্যবহারের পর তা বন্ধ করা হয় না। তাছাড়া পুরসভার বাজারগুলিতে ট্যাঙ্ক ভরে প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে জল নষ্ট হয়।

স্থানীয় অধিবাসীরা বিষয়টি পুরসভার নজরে আনলেও বিশেষ ফল মেলেনি। হাসপাতাল রোড সংলগ্ন ছয় নম্বর ওয়ার্ডের চিন্ময় ঘোষের অভিযোগ, “কোনও পরিকল্পনা না করেই দিনে পাঁচ দফা জল সরবরাহ করছে পুরসভা। এদিকে বহু কলেরই মুখ নেই। ফলে সেই জলের অন্তত ৬০ শতাংশই নষ্ট হয়। বার বার বলা সত্ত্বেও পুরসভার পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’’ মহকুমা শাসকের অফিস সংলগ্ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুকুল তরফদার নামে এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, “পুরসভা জল অপচয় বন্ধ করতে না পারলে পাঁচ বার জল সরবরাহ করার দরকার কি? বরং ফের জল কর চালু করে মিটারের ব্যবস্থা করলে অপচয় অনেকটাই কমবে।’’ গৌরহাটি মোড় সংলগ্ন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক গৃহবধূ মানসী রায়ের বক্তব্য, “রাস্তা-ঘাটে কলের মুখ খোলা দেখলে আমরা কেউ কেউ তা বন্ধ করি। সবাই যাতে অপচয় রোধে এগিয়ে আসেন তা নিয়ে পুরসভা থেকে কোনও প্রচারের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হত।’’

আরামবাগ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১৯টি ওয়ার্ডের ৬৬ হাজার ৭৯ জন বাসিন্দার জন্য প্রতিদিন ৯.৪ মিলিয়ন লিটার জল তোলা হয় রিজার্ভারে। জলের রিজার্ভার রয়েছে মোট পাঁচটি। ২ লক্ষ লিটার থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যন্ত সেগুলির ধারণক্ষমতা। পাম্প হাউস আছে মোট ২৮টি। মাথা পিছু জল দেওয়া হচ্ছে ১৩৬ লিটারের কিছু বেশি। অথচ আরামবাগের মতো মফস‌্‌সল শহরে মাথা পিছু ৭০ লিটার জল দেওয়াই রীতি।

আরামবাগ পুরসভার জল বিভাগ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, আরামবাগে মাথাপিছু বরাদ্দ জলের অনেক বেশি পরিমাণ জল সরবরাহ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, সেই জলের প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি অপচয় হচ্ছে। এই এলাকায় কলের সংখ্যা ১১৫০টি। পানীয় জলের টিউবওয়েল রয়েছে ৮২৫টি।

অন্য বিষয়গুলি:

Arambag Water Drinking Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy