দুর্দশা: গ্রিন জ়োন হলে বদলাবে গঙ্গার এই দশা? —নিজস্ব িচত্র
দিন কয়েক আগে গ্রিন জ়োন করা হয়েছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ডকে। এ বার একই পথে পা বাড়াতে চলেছে উত্তরপাড়াও।
কলকাতার দিক থেকে হুগলি জেলার প্রবেশপথ এই শহরের একাংশকে গ্রিন জ়োন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়েছে, বালিখাল হয়ে শহরে ঢোকার মুখ থেকে কোতরং ধাড়সা পর্যন্ত গঙ্গাপাড়ের প্রায় দু’কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাকে এর আওতায় আনা হবে। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে গঙ্গাকে যথাসম্ভব দূষণমুক্ত করা হবে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন ভবন বা স্থাপত্য-সহ গোটা এলাকা নির্মল হবে। এই এলাকাকে পুরোপুরি প্লাস্টিক-বর্জিত করে তোলার ভাবনা রয়েছে।’’
উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত হুগলির দশটি পুরসভা গঙ্গার ধারে। কিন্তু গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিক থেকে নিকাশি নালার দূষিত জল— সবই গঙ্গায় পড়ে। এ ছাড়াও রয়েছে শিল্প-বর্জ্য। এ সবের ফলে গঙ্গার দূষণ লাফিয়ে বাড়ছে। এই জেলায় চন্দননগর পুর-কর্তৃপক্ষ প্রথম গঙ্গামুখী নিকাশি নালাগুলিকে দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু করে। সম্প্রতি ওই কাজের পাশাপাশি শহরের ঐতিহ্যের স্ট্র্যান্ড এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাকে গ্রিন জ়োন ঘোষণা করে তারা। এ বার উত্তরপাড়া শহরও একই পথে হাঁটতে চাইছে।
কী পরিকল্পনা রয়েছে?
পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রিন জ়োন ঘোষিত এলাকায় প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে প্রত্যেক নাগরিককে। নিকাশি নালার জল দূষণমুক্ত না করে গঙ্গায় ফেলা যাবে না। ধুলো, ধোঁয়া থেকে মানুষ ও পরিবেশকে বাঁচাতে গাড়ি পার্কিং, হর্ন বাজানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ডিজে বাজানো চলবে না। গ্রিন জ়োনের মধ্যে গণভবন, জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার-সহ হেরিটেজ তালিকাভুক্ত দ্রষ্টব্য বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য রক্ষার ক্ষেত্রে পুর-কর্তৃপক্ষ যত্নবান হবেন। এই এলাকায় মিটিং, মিছিল, পথসভা-সহ অন্যান্য কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রশাসনের থাকবে। গঙ্গার দূষণ রোধের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গঙ্গা-দূষণ রোধে ২০০৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করে। সেই কমিটিতে ছিলেন বর্তমানে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র, পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত, পরিবেশ দফতরের তৎকালীন সদস্য-সচিব মদনলাল মিনা। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তৎকালীন আইনি পরামর্শদাতা, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। সেই কমিটি কলকাতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত গঙ্গা নিয়ে সমীক্ষার পরে প্রায় তিনশো পাতার একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। হাইকোর্ট সেই নির্দেশিকাকে মান্যতা দেয়। জাতীয় পরিবেশ আদালতেও তা গৃহীত হয়।
এর পরে গঙ্গার দু’পারে লাগোয়া পুরসভাগুলিকে ওই কমিটির তরফে কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়। যেমন— গঙ্গা থেকে ১০০ মিটার দূরত্বকে ‘প্লাস্টিক ফ্রি-জ়োন’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। প্লাস্টিক, বর্জ্য, নিকাশি নালার দূষিত জল যাতে গঙ্গায় না পড়ে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নির্দেশিকা লঙ্ঘিত হলে তা আদালত অবমাননার সামিল হবে। কার্যক্ষেত্রে অবশ্য ওই নির্দেশ খাতায়-কলমেই থেকে গিয়েছে বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ।
স্বভাবতই গঙ্গা দূষণ নিয়ে উত্তরপাড়া পুরসভার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পানীয় জল, চাষ-আবাদ, শিল্প— সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গঙ্গার উপরে নির্ভরশীল। গঙ্গার দূষণ মানে আমাদের সভ্যতার সঙ্কট। দিলীপবাবুদের উদ্যোগ মানুষ এবং পরিবেশের পক্ষে সহায়ক হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের পরিস্থিতি খুব খারাপ। সেই কারণেও গঙ্গাকে রক্ষার এই পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy