Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ফের অশান্তি হুগলিতে, আক্রান্ত পুলিশও

লোকসভা নির্বাচনের পর খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত বিজেপির দখলে চলে যায়। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এলাকার তৃণমূল কার্যালয়গুলিতে তালা মেরে দেন।

নজরে: খানাকুলের পিলখাঁ-কৌঘষায় অশান্তির জেরে পুলিশ টহলদারি। নিজস্ব চিত্র

নজরে: খানাকুলের পিলখাঁ-কৌঘষায় অশান্তির জেরে পুলিশ টহলদারি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

রাজ্যের যে তিনটি বিধানসভা আসনের উপ-নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছে, তার একটিও হুগলিতে নয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই জয়ের পর থেকেই হুগলির গ্রামীণ এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক অশান্তি। রাতেও তাতে ছেদ পড়েনি। খানাকুলে বিজেপি-তৃণমূল হানাহানি ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। পান্ডুয়ায় ছুরির আঘাতে জখম হয়েছেন এক বিজেপি কর্মী। হরিপালে বোমাবাজি হয়। প্রতিটি ঘটনা নিয়েই বিজেপির সঙ্গে শাসকদলের চাপান-উতোর তুঙ্গে।

লোকসভা নির্বাচনের পর খানাকুলের ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকা কার্যত বিজেপির দখলে চলে যায়। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা এলাকার তৃণমূল কার্যালয়গুলিতে তালা মেরে দেন। ভাঙচুরেরও অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার ওই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় বিজয়-উৎসব করে তৃণমূল। সন্ধ্যায় ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের হায়দার আলির নেতৃত্বে বিজয়-মিছিল হয় পিলখাঁ-কৌঘষা বাজারে। কৌঘষায় ভাঙচুর হওয়া দলীয় কার্যালয় চত্বরে নতুন করে তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে সেটি পুনরুদ্ধার করা হয়। এর পরেই দু’দল পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে।

বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, মারধরের খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ যায়। বাঁশ এবং লাঠির ঘায়ে পুলিশ কনস্টেবল হাসান বাসার এবং ভিলেজ পুলিশ সাবেক চৌধুরী আহত হন। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দু’টি মোটরবাইকও। আহত দুই পুলিশকর্মীকে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের উপরে বিজেপির লোকজন হামলা চালিয়েছে। বিজেপি অভিযোগ মানেনি। পুলিশকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ওই রাতেই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় মাজি বিজেপির খানাকুল মণ্ডলের সভাপতি। বাকি দু’জন হলেন অরুণ কুণ্ডু এবং অনন্ত দলুই। তাঁরাও বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতদের শুক্রবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক মৃত্যুঞ্জয় এবং অরুণকে চার দিন পুলিশ হেফাজত এবং অনন্তের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশকে মারধরের ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নয়, এই দাবি করে বিজেপির আরামবাগ জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের অভিযোগ, গোলমাল দেখেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূলের ছেলেরা মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয় এবং ওঁর পরিবারের লোকজনকে ওরা মারধর করে। ঘরে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়। আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও হামলা করে। তা সত্ত্বেও পুলিশ আমাদেরই দুষেছে। গ্রামবাসীই পুলিশের ভূমিকায় বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূল এখানে সন্ত্রাস কায়েম করতে চাইছে।’’ মৃত্যুঞ্জয়ের বৃদ্ধা মা শেফালিদেবীর অভিযোগ, “আমি অসুস্থ বলে ছেলে-বৌমা আমাকে খাটের তলায় লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। ওরা আমাকে বের করে বাঁশ দিয়ে মেরেছে।” অভিযোগ উড়িয়ে ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দারের দাবি, ‘‘মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে হামলার সঙ্গে আমাদের ছেলেদের যোগ নেই। ওরাই বাজারে তাণ্ডব করেছে। আমাদের কর্মীর দোকান ভাঙচুর করেছে। পুলিশের উপর হামলা করেছে।’’

তৃণমূলের বিজয়-মিছিলকে ঘিরে ওই রাতে পান্ডুয়ায় এক দফা অশান্তি হয়েছিল। এক বিজেপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিবাদে তেলিপাড়ায় জিটি রোড অবরোধ করে বিজেপি। তৃণমূল কর্মী শেখ সাবির বিজেপির পান্ডুয়া অঞ্চলের বুথ সভাপতি রতন দত্তের ডান গালে ছুরি চালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। রতনকে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতেই অভিযুক্ত সাবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ওই গোলমালকে ঘিরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের সঞ্জয় ঘোষের নামেও থানায় অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা অশোক দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে বিনা কারণে মারধর করেছে তৃণমূল।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ বিজয়-মিছিল করেছি। বিজেপি অকারণে এলাকায় অশান্তি করছে। আমাদের দলের কেউ ওদের মারধর করেনি।’’

হরিপালের গোপীনগরে আবার এক বিজেপি কর্মীর বাড়ি এবং কাছেই একটি বিজেপি কার্যালয়ের সামনে বোমাবাজি করার অভিযোগ ওঠে আশুতোষ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুমিত সরকার ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। ওই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে ইট পড়ে। সুমিতবাবু অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা। এলাকায়

পুলিশ যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

By Election BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy