নৈটির বাসিন্দা অজিত দাস ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে এখনও ভাঙা বাড়ি মেরামত করতে পারেননি। ছবি: দীপঙ্কর দে
ছ’মাস পরেও তাঁরা স্বপদে বহাল!
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে দূর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে তৃণমূলের তরফ থেকে দু’জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ এবং জগৎবল্লভপুরের পতিহাল পঞ্চায়েতের দলীয় উপপ্রধান বেচারাম বসুকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে তৃণমূলের তরফ থেকে পদ ছাড়তে বলা হয়েছিল। একই সঙ্গে দলের সব পদ থেকেও ‘সাসপেন্ড’ করা হয়। কিন্তু এখনও তা রয়ে গিয়েছে শুধুই খাতায়-কলমে। দু’জনেই স্বপদে রয়ে গিয়েছেন।
কী ভাবে?
সে উত্তর জয়ন্তবাবু দেননি। তাঁর দাবি, ‘‘দলকে চিঠি দিয়ে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। দলের নির্দেশ মতোই চলছি।’’ বেচারামবাবু বলেন, ‘‘কেন পদত্যাগ করিনি বা কেন কাজ করছি, তা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। দলে র অনুগত সৈনিক হিসাবে সাংবাদিকদের কাছে এই সব গোপনীয় ব্যাপারে মুখ খুলব না।’’
উত্তর মিলছে না জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকেও। তৎকালীন জেলা সদর তৃণমূল সভাপতি তথা রজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত আমার ছিল না। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই আমি ওই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলাম। এখন আমি দলের সভাপতি নেই। ফলে, এখনকার অবস্থা বলতে পারব না।’’ দলের বর্তমান জেলা সদর সভাপতি লক্ষ্মীরতন শুক্ল ফোন ধরেননি। এ নিয়ে এসএমএসেরও জবাব দেননি।
বিরোধীরা দাবি করেছে, তথাকথিত এই ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ আসলে চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যবস্থা নিলে দলের অনেক বড় মাথা জড়িয়ে পড়বে। তাই এটা নিয়ে ওদের নেতারা আর খুব বেশি এগোতে চাননি।
শুধু একটি-দু’টি ক্ষেত্রে নয়, আমপানের অব্যবহিত পরেই পঞ্চায়েত এবং কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির তৈরি করা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল হাওড়া এবং পাশের হুগলি জেলাতেও। যার জেরে শেষমেশ রাজ্য সরকার ব্লক প্রশাসনের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠন করে দ্বিতীয় দফায় তালিকা করে ক্ষতিপূরণ বিলির নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে, যাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি, অথচ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন, তাঁদের সেই টাকা ফেরতেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু সেই নির্দেশও অনেক ক্ষেত্রেই খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বহু টাকা ফেরেনি। দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও হুগলিতে নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। চণ্ডীতলা-২ ব্লকের গরলগাছায় তৃণমূলের প্রধান ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নিজের স্ত্রীর নাম ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তার জেরে দল প্রধানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। যদিও তিনি তা মানেননি। আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান সোহরাব হোসেনের পাঠানো ৫৫ জনের তালিকায় তাঁর একাধিক আত্মীয়, প্রতিবেশী ও দলীয় নেতাদের নাম ছিল। স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে হরিণখোলা-১ পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আজিজ খানের বিরুদ্ধেও। এমন উদাহরণ আরও আছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নিখিলেশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘বিডিওরা তদন্ত করে যাঁরা টাকা পাওয়ার উপযুক্ত নন, তাঁদের নোটিস পাঠিয়েছেন। টাকা ফেরত নেওয়া হচ্ছে।’’ তবে, এখনও পর্যন্ত কত টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে, সেই হিসেব মেলেনি।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ কতটা?
হরিপালের সহদেব পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বেচারাম সাঁতরা বলেন, ‘‘মাটির বাড়িতে থাকি। আমগাছ পড়ে অনেক টালি ভেঙে গিয়েছিল। পাঁচিলও ভেঙে যায়। সরকারি লোকেরা দেখে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাইনি। ধারদেনা করে সারাতে হল।’’ একই ক্ষোভ পান্ডুয়ার সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের বৃদ্ধা শুভ্রা বসু, বলাগড়ের মিলনগড়ের চন্দন সাহা, কমলা ঘোষাল, জাঙ্গিপাড়ার কোতলপুরের গোবিন্দ ধাড়া, চণ্ডীতলা-২ ব্লকের নৈটির আনন্দ রায়-সহ অনেকেরই। আনন্দ বলেন, ‘‘সরকারি দফতরে গিয়ে লাভ হয়নি। ধারদেনা করে টালি লাগিয়েছি। ভাঙা দেওয়াল মেরামত করতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy