Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দুই টোলপ্লাজ়ায় রোজ যানজট, দুর্ভোগ যাত্রীর

নয়া পদ্ধতিতে (ফাস্ট্যাগ) জাতীয় সড়কে টোল নেওয়া শুরু হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’প্রান্তের দুই টোলপ্লাজ়ায় (ডানকুনি ও পালসিট) যানজট থেকে রেহাই মেলেনি।

স্তব্ধ: ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট। —ছবি: দীপঙ্কর দে

স্তব্ধ: ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট। —ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় সৌমেন দত্ত
ডানকুনি-পালসিট শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

এ যেন হিতে বিপরীত!

নয়া পদ্ধতিতে (ফাস্ট্যাগ) জাতীয় সড়কে টোল নেওয়া শুরু হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’প্রান্তের দুই টোলপ্লাজ়ায় (ডানকুনি ও পালসিট) যানজট থেকে রেহাই মেলেনি। যাত্রীদের অভিযোগ, বিশেষ করে ডানকুনি টোলপ্লাজ়ায় রোজই সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ির লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গাড়িতে ফাস্ট্যাগ লাগিয়ে লাভ কী হল, এ প্রশ্নও উঠছে।

জাতীয় সড়কে টোল দেওয়ার জন্য নয়া ওই অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্র। যার মাধ্যমে গাড়ি না-থামিয়েই টাকা দেওয়ার কথা। নতুন এই পদ্ধতিকে ফাস্ট্যাগ বলা হচ্ছে। যা গাড়ির ডিজিটাল তথ্যসম্বলিত ট্যাগ বা পাতলা কার্ড। রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) প্রযুক্তিতে কাজ করে ফাস্ট্যাগ। টোলপ্লাজ়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার

সময় সেই ট্যাগ ‘স্ক্যান’ হতেই

‘পাসিং গেট’ খুলে যায়। গাড়ির সামনের কাচে (উইন্ডস্ক্রিন) এই ট্যাগ লাগাতে হয়। এই ট্যাগ থাকলে টোলপ্লাজ়াগুলিতে গাড়ির লাইন হওয়ার কথা নয়। গাড়ি না-থামিয়েই এই ট্যাগের মাধ্যমে মেটানো যায় টোলের টাকা। ট্যাগের সঙ্গে যুক্ত থাকা অ্যাকাউন্ট (ওয়ালেট) থেকে কেটে নেওয়া হয় ওই টাকা।

তা হলে ডানকুনি বা পালসিট টোলপ্লাজ়ায় লাইন কেন?

পালসিটে যানজট তুলনায় কম। ওই টোলপ্লাজ়া সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাস্ট্যাগের স্টিকার গাড়িতে যে জায়গায় রাখলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে টোল কেটে নেওয়ার কথা, অনেক গাড়িতে সেই জায়গায় থাকছে না। ফলে, সেই গাড়িগুলি আটকে পড়ছে টোলপ্লাজ়ার লেনে। কর্মীদের সহায়তায় স্টিকার ঠিক জায়গায় আনার পরে সেগুলি বেরোতে পারছে। এর জেরে অনেক সময়ে বেশ কিছু গাড়ি আটকে পড়ছে ও যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া সকালের দিকে বালি-সহ নানা সামগ্রী নিয়ে যাওয়া ট্রাক্টর ফাস্ট্যাগের লেনে ঢুকে পড়ায় বিপত্তি হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। পুরনো পদ্ধতিতে টোল নেওয়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে

একটি করে লেনে। ট্রাক্টরের ফাস্ট্যাগ না থাকায় সেই লেন ধরা উচিত।

কিন্তু ট্রাক্টর চালকদের একাংশের ভুলের জন্য মাঝেমধ্যে টোলপ্লাজ়ায় জট হচ্ছে। তবে দ্রুতই তা

সামাল দেওয়া হচ্ছে বলে টোলপ্লাজ়া কর্মীদের দাবি।

সূত্রের খবর, ডানকুনি টোলপ্লাজ়া দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২২-২৫

হাজার গাড়ি চলে। দু’দিকে ছ’টি করে মোট ১২টি লেন রয়েছে। এর মধ্যে একটি করে লেন ভিআইপি-দের জন্য নির্দিষ্ট। ‌একটি করে লেনে এখনও পুরনো পদ্ধতিতে নগদে টোল নেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলি হয়ে গিয়েছে ‘ফাস্ট্যাগ লেন’। তবু যানজট এড়ানো যাচ্ছে না।

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) এক কর্তা অবশ্য সমস্যা দ্রুত মিটবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ফাস্ট্যাগের ব্যবহার সবে শুরু হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই প্রাথমিক ভাবে শুরুর সময়ে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। দ্রুত সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’

এনএইচএআই-এর একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নতুন এই প্রযুক্তি সম্পর্কে এখনও সব গাড়ি-চালক ওয়াকিবহাল নয়। ফাস্ট্যাগ না লাগিয়েও অনেক গাড়ি ওই লেনে

চলে আসছে। ফলে, যানজট হচ্ছে। আবার ডানকুনিতে ১৬ চাকার গাড়ি যাওয়ার কোনও লেন-ই তৈরি হয়নি। অথচ, সে গাড়িও ঢুকে পড়ছে। সেই সব গাড়িকে ‘ভিআইপি লেন’ দিয়ে বের করতে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, ফাস্ট্যাগের প্রযুক্তিগত কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলে ওই পদ্ধতিতে টোল নেওয়া যাচ্ছে না।

যানজটে হাঁফিয়ে ওঠা যাত্রী বা গাড়ি-চালকেরা অবশ্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এ সব কথা মানতে চাইছেন না। পরিকাঠামো পুরোদস্তুর তৈরি না-করে কেন নয়া প্রযুক্তি চালু করা হল, এ প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। বালি থেকে রোজ ওই পথে

বর্ধমান যাতায়াত করেন বিজন দাস। তাঁর খেদ, ‘‘আগে টাকা দিয়েও ডানকুনি টোলপ্লাজ়ায় ভোগান্তি দস্তুর হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম ফাস্ট্যাগ চালু হলে দুর্ভোগ কমবে।

তাই চালু হতেই করিয়ে নিয়েছি। কিন্তু ফল দেখছি উল্টো। দিনের বেলায় সমস্যা তুলনায় কম হলেও সন্ধ্যা সাতটার পর বেশি রাতে ওই পথে গাড়ি নিয়ে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

NHAI Toll Plaza
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy