সেই পোস্টার। নিখোঁজ দিনু (উপরে)। নিজস্ব চিত্র
হানাহানির রাজনীতিতে অভ্যস্ত হাওড়ার ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনানপুর পঞ্চায়েত বহু বছর ধরে রক্ত দেখেছে। অভিযোগ, সম্প্রতি এক যুবক দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা থানার দ্বারস্থ হলেও লাভ হয়নি। তাই রবিবার ঘোড়াবেড়িয়া গ্রামের ফুটবল মাঠে শান্তি কমিটি গড়লেন তাঁরা— দলমত নির্বিশেষে। তবে সে দলে রয়েছেন শাসকদলের বেশির ভাগ কর্মী। যাঁরা আঙুল তুলেছেন দলেরই কিছু নেতার দিকে।
গত ৫ মার্চ মহম্মদ হানিফ (দিনু) নামে স্থানীয় এক যুবক কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তিনি কুলিয়াঘাটে মুণ্ডেশ্বরীর সাঁকো পার হয়ে গ্রামে ঢুকেছিলেন। হানিফ একশো দিনের কাজের সুপারভাইজার ছিলেন। পরিবারের দাবি, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ছ’মাস আগে তিনি কাজ ছেড়েছিলেন। হানিফ বলেছিলেন ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যে দুর্নীতি হয়েছে তা তিনি ফাঁস করে দেবেন। সেই কারণেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছি বলে তাঁর পরিবারের আশঙ্কা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসকদলের কিছু নেতার মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরাই এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। হানিফকে উদ্ধার করার দাবি জানিয়ে দলমত নির্বিশেষে প্রায় সব বাসিন্দাই পুলিশের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও হানিফকে ফেরানো যায়নি।
এলাকার তৃণমূল কর্মী শেখ হামিদ বলেন, ‘‘দিনু নিখোঁজ। গ্রাম জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। সন্ধ্যার পরে কেউ বাইরে বেরোচ্ছেন না। মানুষকে সাহস দেওয়ার জন্যই আমরা পথে নেমেছি।’’ হামিদের প্রতিবেশী শেখ মন্টু বলেন, ‘‘এর আগেও বহু সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদ করতে সাহস পাইনি। হানিফের ঘটনায় যদি চুপ করে থাকি তা হলে আরও অনেককে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’ শেখ মন্টুও নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করেছেন। হামিদ বলেন, ‘‘আমাদের দলের ব্যানার ব্যবহার করে যারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সেটা আমরা করব।’’
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েতের অন্যতম কর্তা বাপি মল্লিক বলেন, ‘‘গ্রামে কোনও অশান্তি নেই। দুর্নীতিও হচ্ছে না।’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা আবার জানান, এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হানিফের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনানপুরে সন্ত্রাসের ইতিহাস অনেক পুরনো। ২০০৮ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ছিল সিপিএমের দুর্গ। তারপর ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর প্রধান-সহ পঞ্চায়েতের কংগ্রেস ও সিপিএম সদস্যরা যোগ দেন তৃণমূলে।
২০১৩ এবং ২০১৮ –র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখে তৃণমূল। কিন্তু এলাকায় লাগামছাড়া দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে তখন থেকেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বালা ও বিলু নামে দুই দুষ্কৃতী তোলাবাজি শুরু করে। এমনকি রেহাই পাননি বাইরে থেকে পড়াতে আসা শিক্ষকরাও। ফলে তাঁরা ভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেন— এলাকার সব প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, বালা-বিলুকে মদত দিত তৃণমূল। পরে অবশ্য পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় ভাটোরা তদন্তকেন্দ্র গড়া হয়।
২০১৭ সালে তদন্তকেন্দ্রের সামনেই খুন হয়ে যান তৃণমূল নেতা শেখ সাজাহান এবং তাঁর ভাই শেখ লালচাঁদ। জোড়া খুনে মূল অভিযুক্ত ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল প্রধানের স্বামী শেখ ইমতিয়াজ। অভিযোগ সঙ্গে ছিল বালা, বিলু-সহ আরও কয়েকজন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে উলুবেড়িয়ায় খুন হয়ে যান ইমতিয়াজও। তাঁকে খুনে আবার অভিযুক্ত পঞ্চায়েতের কর্তাদের একাংশ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কর্তাদের কয়েকজনের নেতৃত্বেই এখন গ্রাম পঞ্চায়েতে চলছে লাগামছাড়া দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হচ্ছে। অনেককে ঘরছাড়া করা হয়েছে।
শান্তি কমিটি গঠন করে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন এই সন্ত্রাস তাঁরা আর সহ্য করবেন না। কমিটির অন্যতম নেতা বাবলু কাজি বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে বলব অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলন। কোনও অত্যাচারের খবর পেলে আমরাই তাঁদের হয়ে থানায় যাব।’’ এ দিনের বৈঠকে প্রায় ২০০ জন মহিলা-পুরুষ হাজির ছিলেন। সকলেই প্রতিবাদে সম্মত হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy