আরামবাগে অ্যাঞ্জেলের মালিকের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
একসময় ‘আরামবাগের গর্ব’ বলা হত যাকে, সেই শেখ নাজিবুল্লা ওরফে রাহুল এখন ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা চালানোর অভিযোগে সিবিআই হেফাজতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংস্থার হাত আরামবাগ পর্যন্ত পৌঁছবে কিনা, এ বার তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। শাসকদলের অন্দরমহলের খবর, অ্যাঞ্জেল অ্যাগ্রিটেক গ্রুপ অব কোম্পানিজ়-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাজিবুল্লার থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ।
নাজিবুল্লার বাড়ি আরামবাগের বাতানলে। ২০১৩ সালে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে রাজ্যের একের পরে এক ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থায় ঝাঁপ পড়ে। সেই তালিকায় ছিল নাজিবুল্লার সংস্থাও। অভিযোগ, অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানতকারীদের থেকে ৪৫৪ কোটিরও বেশি টাকা তুলেছিল সে। তারপর আর নাজিবুল্লাকে আরামবাগে দেখা যায়নি। সিবিআইয়ের হাতে ধরার পড়ার পরে রবিবার বারুইপুর আদালত তাকে ১০ দিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে পাঠায়। নাজিবুল্লার গ্রেফতারির খবর আসতেই ঘুম ছুটেছে আরামবাগের তৃণমূল নেতাদের একাংশের। যদিও এ বিষয়ে তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা রাজনৈতিক
বিষয় নয়। সিবিআই তদন্ত করছে। তারা মনে করলে কাউকে ডেকে পাঠাতেই পারে।’’ তৃণমূলের কেউ নাজিবুল্লার থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে দিলীপ বলেন, ‘‘আমার কাছে এ ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি।’’
আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের বাণিজ্যের স্নাতক বছর সাঁইত্রিশের নাজিবুল্লাকে আরামবাগবাসী ‘রাহুল’ নামেই চেনেন। রবীন্দ্রজয়ন্তী থেকে যুব উৎসব, পুস্তক মেলা থেকে পুজো— শাসকদলের নেতাদের অনেক অনুষ্ঠানেই অর্থসাহায্য করত নাজিবুল্লা। সে কথা প্রকাশ্যে বলেও বেড়াত সে। অনেকে আবার তাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘আরামবাগের গর্ব’ এবং সমাজসেবী বলেও অভিহিত করতেন। অভিযোগ, গাড়ি হোক বা মোবাইল, চাইলেই নেতাদের কাছে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিত সে। নাজিবুল্লার সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যেত অনেক তৃণমূল নেতাকেও। তার ছবিও রয়েছে অনেকের কাছে। সেই সব ছবি প্রকাশ্যে এলে ওই নেতাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন আরামবাগের তৃণমূল নেতাদের একাংশ। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে তাঁরা রাজি নন। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “টাকা বা অন্য কিছু সুবিধা নেওয়ার প্রমাণ হয়তো মিলবে না। হয়তো কিছুই হবে না। কিন্তু সিবিআই ডাকাডাকি করতে পারে। ভোটের মুখে এই ভয়টাই অনেকে করছেন।”
২০১৩ সালে নাজিবুল্লার সংস্থায় ঝাঁপ পড়তেই সেখানে লগ্নিকারীদের বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে। বেশি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু আমানতকারীর থেকে টাকা নিয়েছিল নাজিবুল্লা। ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি দুপুরে আরামবাগের বসন্তপুরে তার সংস্থায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করে তদন্তকারী সংস্থা। তবে তার টিকি ছুঁতে পারেননি তদন্তকারীরা। তারও আগে নাজিবুল্লার কলকাতার দু’টি বাড়ি এবং তার গ্রামের বাড়িতেও তল্লাশি হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি।
আরামবাগের থেকে উধাও হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে নাজিবুল্লা দাবি করেছিল, সে ‘সৎ পথেই কাজ’ করছে। সেই কাজে যাতে ব্যাঘাত না-ঘটে তার জন্য সরকারের থেকে সহযোগিতাও চেয়েছিল সে। দাবি করেছিল, পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে সাড়ে পাঁচ বছরে আমানতকারীদের হাতে লগ্নির দ্বিগুণ টাকা তুলে দেওয়া সম্ভব। আরামবাগের পারুলে ৮ কোটি টাকায় কেনা ৮৪ কাঠা জমি ৫ মাসের মধ্যে ১৬ কোটি টাকা দাম হয়েছে বলে দাবি করেছিল নাজিবুল্লা। কলকাতার গিরিশ পার্কে ২২ লক্ষ টাকা কাঠা দরে জমি কিনে ছ’মাসের মাথায় ৪০ লক্ষ টাকা কাঠায় বিক্রি করেছিল বলে তখন জানিয়েছিল সে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অর্থলগ্লি সংস্থা তৈরির পরে ২০০৯ সালে বাজার থেকে টাকা তোলা শুরু করে নাজিবুল্লা। তার গ্রেফতারি নিয়ে কোনও মন্তব্যে নারাজ তার পরিবার। আরামবাগের একটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত নাজিবুল্লার দাদা শেখ গোলাপ বলেন, “ভাইয়ের খবর রাখিনি। কোন মন্তব্যও করব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy