পান্ডুয়ার তিন্না মোড়ে জিটি রোড অবরোধ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। —নিজস্ব িচত্র
ঘরে ‘অসন্তোষ’। বাইরে বিক্ষোভ। রবিবার পান্ডুয়ায় তৃণমূলের সভা নিয়ে তৈরি বিতর্কে ‘বেকায়দায়’ রাজ্যের শাসক দল।
সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের পান্ডুয়ার এক দলীয় সভায় ডাকার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসক দলের এ হেন আচরণের প্রতিবাদ করায় এক মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগও উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই তপ্ত পান্ডুয়ার রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের অন্দরে এ নিয়ে ‘অসন্তোষ’ ছড়িয়েছে বলে খবর। সোমবার ওই ঘটনার প্রতিবাদে জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মী-সমর্থকেরা।
চম্পার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দাবিতে এ দিন বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ পান্ডুয়ার তিন্না মোড়ে জিটি রোড অবরোধ করে বিজেপি। সেখানে হাজির ছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অনেক সদস্যা। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। বিক্ষোভের জেরে জিটি রোডে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
অন্য দিকে, তৃণমূলের অন্দরেও ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ ছড়িয়েছে বলে খবর। তৃণমূলে চম্পা-বিরোধী বলে পরিচিত পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা যখন ব্লকের সর্বত্র ঘুরে ঘুরে দুয়ারে সরকার কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাছে পৌছনোর চেষ্টা করছি, তখন দলের একাংশ মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে দলের সভায় আনছেন। এই সব করা মানে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। ঘটনার ফায়দা তুলতে এ দিন পথে নেমেছে বিজেপি। ফলে, প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তবে কি পরিকল্পনা মাফিক দলের কেউ-কেউ বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চাইছেন।’’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সঞ্জয়ের মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা কাউকে কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়ে সভায় ডাকিনি। কারণ, সভাটি ব্লক নেতৃত্বের ডাকে হয়নি। সেটি হওয়ার কথা ছিল চুঁচুড়ায়। জেলা নেতৃত্বের নির্দেশে হয়েছে পান্ডুয়ায়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওখানে যাঁরা গোলমাল পাকাতে চেয়েছিলেন, তাঁরা বিজেপির লোকজন। বিজেপি পরিকল্পনা করেই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ অসিত-গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চম্পার দাবি, ‘‘সভায় আসা কোনও মহিলাকে নিগ্রহ বা হেনস্থা করা হয়নি। এক জন মহিলা গোলমাল পাকাতে এসেছিলেন। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার জন্য সভা ডাকা হয়নি। শুনে তিনি চলে গিয়েছিলেন। পরে ফিরে এসে আবার গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেন। তাঁকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে যায়।’’
সুযোগ বুঝে তৃণমূলকে এক হাত নিয়েছে সিপিএম। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের অভিযোগ, ‘‘সভায় আসা তৃণমূলের এক রাজ্য নেতাকে দেখানোর জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সভায় হাজির করিয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। রাখি তৈরি করার বরাত দেওয়া ছাড়াও কম্বল ও সভায় আসার জন্য প্রত্যেককে একশো টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা। সরকারি প্রকল্পের সুযোগ পেতে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মহিলা। তাঁদের সিংহ ভাগই তৃণমূল করেন না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের এই আচরণের প্রতিবাদ করায় অনেক মহিলা ও তাঁর স্বামীকে রবিবার রাতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে আইনের পথে হাঁটব আমরা।’’
এ দিন জিটি রোড অবরোধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজেপির পান্ডুয়া মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী দুলালি মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সভার আগে গ্রামে গ্রামে দু’দিন ধরে প্রচার চালিয়েছিল তৃণমূল। বলেছিল, রাখি বানানোর বরাত দেওয়া হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী মহিলাদের। এ-ও বলা হয়েছিল, সভা থেকে সরকারি প্রকল্পের কার্ড দেওয়া হবে, যা দেখিয়ে চাল ও অন্য সামগ্রী মিলবে। এর প্রতিবাদ করে মার খেয়েছেন এক মহিলা। আমিও একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। আমরা তৃণমূলের এই কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy