Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary Exam

দুঃস্থ পড়শির সন্তানের জন্য যুদ্ধ পরিচারিকার

রিঙ্কুরা তিন ভাইবোনই লক্ষ্মীকে ‘মা’ ডাকে। তবে, তারা অনাথ নয়, দুঃস্থ।

 ভরসা: তিন সন্তানের সঙ্গে লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

ভরসা: তিন সন্তানের সঙ্গে লক্ষ্মী। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০০:৫৪
Share: Save:

আজ আর কলকাতায় পরিচারিকার কাজ করতে যাওয়া হবে না লক্ষ্মীর। রিঙ্কুর উচ্চ মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে।

রিঙ্কু ওই মহিলার সন্তান নয়, পড়শির। শ্যামপুরের গাদিয়াড়ার বাসিন্দা লক্ষ্মী সিংহ শুধু রিঙ্কুই নয়, তার দুই ভাইবোনেরও খাওয়া-পড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে নিয়েছেন পরিচারিকার কাজ। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আজ কাজে ছুটি নিয়েছেন। ‘মেয়ে’র সঙ্গে তার পরীক্ষাকেন্দ্রে যাবেন বলে।

রিঙ্কুরা তিন ভাইবোনই লক্ষ্মীকে ‘মা’ ডাকে। তবে, তারা অনাথ নয়, দুঃস্থ। রিঙ্কুর বাবা সঞ্জীব বাগ জনমজুরি করতেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করতে পারছেন না। তাঁর স্ত্রী যমুনা সংসার চালাতে গ্রামেই পরিচারিকার কাজ করেন। কিন্তু অসুস্থ স্বামীকে দেখভাল করতে গিয়ে নিয়মিত সেই কাজে যেতে পারেন না। ফলে, অর্থাভাবে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রথম থেকেই অবশ্য রিঙ্কুকে নিজের কাছে রেখে তার খাওয়া-দাওয়া এবং পড়াশোনার ব্যবস্থা করেন লক্ষ্মী এবং তাঁর স্বামী। পরে রিঙ্কুর দুই ভাইবোনকেও নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন।

লক্ষ্মীর স্বামী গাড়ি চালাতেন। বছর তিনেক আগে মারা যান। বছর কুড়ির ছেলেকে নিয়ে ওই মহিলার সংসার। ছেলেও মাঝেমধ্যে গাড়ি চালান। উপার্জন নিয়মিত নয়। ফলে, নিজের সংসার চালাতে এবং পড়শির তিন সন্তানকে বড় করতে বছর চল্লিশের লক্ষ্মীকে পরিচারিকার কাজ নিতে হয়। তিনি কলকাতায় চার বাড়িতে কাজ করেন। সোমবার সকালে চলে যান। শনিবার রাতে ফেরেন।

শুধু রিঙ্কুদের তিন জনের জন্যই মাসে অন্তত আট হাজার টাকা খরচ হয় লক্ষ্মীর। নিজের ঘরের ভাঙা টালির চাল এখনও সারিয়ে উঠতে পারেননি। বৃষ্টি হলে জল পড়ে। তবু দুশ্চিন্তা নেই। পড়শির সন্তানদের বড় করতে তোলাতেই তাঁর আনন্দ। রিঙ্কুর জন্য পাঁচ জন গৃহশিক্ষক রেখেছেন। রিঙ্কুর মেজো বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার জন্য তিন জন গৃহশিক্ষক আছেন। ছেলেটি পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। তার জন্য রয়েছেন এক জন গৃহশিক্ষক।

লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘যে তিন ছেলেমেয়েকে আমি নিজের কাছে রেখেছি, মূলত সেই খরচ তুলতে আমাকে পরিচারিকার কাজ নিতে হয়েছে। স্বামী বেঁচে থাকার সময় খরচের জন্য আমাকে ভাবতে হত না। কিন্তু এখন আমি নিরুপায়। ঘরের চাল ফুটো থাকুক, সরকারি সাহায্য না পাই, কোনও আক্ষেপ নেই। ওরা তো বড় হবে। যতদূর পড়তে চায় পড়বে। আমি আছি।’’

‘‘আমরাও তিন ভাইবোন আছি। ঠিক করেছি, পড়াশোনা করে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে মায়ের সব দুঃখ দূর করে দেব।’’— উচ্চ মাধ্যমিক দিতে যাওয়ার আগে প্রত্যয়ের সুরে বলছে গুজারপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিঙ্কু। আর তার গর্ভধারিণী পড়শির এই উদারতায় কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

‘‘লক্ষ্মী না থাকলে ওদের যে কী হত!’’— ভাবতে পারছেন না যমুনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary Exam Maid Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE