Advertisement
০৪ জুলাই ২০২৪
Coronavirus Lockdown

আমপানে উড়েছে ছাদ, নুরের পাশে নবি

নিজের স্কুল এবং অ্যাকাডেমি তো বটেই বাংলা দলের হয়ে নুর আইএফএ অনুমোদিত বহু প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে।

সাহায্য: নুরের সঙ্গে নবি। নিজস্ব চিত্র

সাহায্য: নুরের সঙ্গে নবি। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

গ্রামের বুক চিরে চলে গিয়েছে ঢালাই রাস্তা। সেখান থেকে বাঁক নিয়ে বাগনান-২ ব্লকের পিপুল্যান গ্রামের প্রায় ৫০০ ফুট ভিতরে বৃষ্টি ভেজা কাদা মাখা পথ পার হয়ে যা দেখা গেল সেটিকে ঘর না বলে আশ্রয় বলাই উপযুক্ত। এক চিলতে ২০০ বর্গফুট এলাকা ছিটেবেড়ার দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। মাঝখানে ছিটে বেড়া দিয়েই দু’ভাগ করা হয়েছে। মাথার উপরে একটা সময়ে ছিল টালির ছাউনি। আমপান সেই ছাউনি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েতের পাওয়া ত্রিপল দিয়ে আপাতত ঢাকা হয়েছে সেই খোলা অংশ।

এখানেই থাকেন ২০১৯ সালের সুব্রত মুখার্জি কাপ আন্তর্জাতিক স্কুল ফুটবল কাপে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা খেলোয়াড় নুর হোসেন। ১৬ বছর বয়সী এই উদয়ীমান ফুটবলারের এখন একমাত্র চিন্তা চাল উড়ে যাওয়া কুঁড়ে ঘর পাকাপাকিভাবে মেরামতি করা।

নুর পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দির থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। গঙ্গাধরপুর বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা এই গ্রামেরই বাসিন্দা শঙ্কর খাঁড়া পাঁচ বছর আগে নুরের মধ্যে ফুটবলের প্রতিভা দেখে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন নিজের স্কুলে। একইসঙ্গে তাঁকে ভর্তি করিয়ে দেন ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। স্কুলের হস্টেলেই সে নিখরচায় থাকে। অ্যাকাডেমিতে নেয় ফুটবল প্রশিক্ষণ। নিজের স্কুল এবং অ্যাকাডেমি তো বটেই বাংলা দলের হয়ে নুর আইএফএ অনুমোদিত বহু প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছে।

কিন্তু করোনার জন্য তার খেলা বন্ধ। গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো জীবনে এসেছে আমপান। নুরের বাবা শেখ রফিক আলি পেশায় হকার। তাঁর দুই ছেলে তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাতে টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় আর পাকা বাড়ি তৈরি করতে পারেননি।

তবে নুরের পরিবার আশার আলো দেখতে পেয়েছে বিভিন্ন মহল সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায়। বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেনের উদ্যোগে বাড়ির ক্ষতিপূরণের সরকারি ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের গ্রামেরই সামাজিক সংগঠন, ফুটবল অ্যাকাডেমি কেইউসিটি এবং স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে আসেন ফুটবলার রহিম নবি। ‘প্লেয়ার্স ফর হিউম্যানিটি’ নামে ফুটবলারদের নিয়ে একটি সংগঠনের হয়ে তিনি বালি, ইট এবং সিমেন্ট কিনে দিয়ে গিয়েছেন। রহিম বলেন, ‘‘ উদীয়মান একজন ফুটবলার আশ্রয়হীন হয়ে যাবেন সেটা সহ্য করা কঠিন।’’

কবে নতুন বাড়ির কাজ শুরু হয় সেই আশাতেই এখন দিন গুনছে নুর এবং তার পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE