প্রধানের বাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর দে
বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝাঁ-চকচকে দোতলা বাড়ি। অথচ প্রশাসনের নথি বলছে, এই বাড়ি আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত! সরকারি তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা অনুমোদনও হয়েছে।
এই বিষয় নিয়েই চণ্ডীতলা-২ ব্লকের গরলগাছা পঞ্চায়েত এলাকা সরগরম। কারণ, বাড়িটি খোদ তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান নরেন্দ্রনাথ ওরফে মনোজ সিংহের। অভিযোগ, স্ত্রী মিনতির নামে তিনি ওই টাকা পাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী এবং প্রধান ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির নামও রয়েছে ওই তালিকায়। তাঁদেরও পাকা বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই খবর চাউর হতেই মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, যে সব গরিব মানুষের ঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই পঞ্চায়েতে বারবার ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না। অথচ, শাসক দলের জনপ্রতিনিধি টাকা আত্মসাৎ করছেন। সুর চড়াচ্ছেন বিরোধীরাও।
গরলগাছা পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন। ইতিমধ্যে ৯৪ জনের নাম অনুমোদিত হয়েছে। সেই তালিকাতেই রয়েছে মিনতির নাম। বিষয়টি মেনে নিয়েছেন প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি। স্ত্রী প্রশাসনের কাছে ওই তালিকা থেকে নাম বাতিলের আবেদন করেছেন।’’ কেন তাঁরা আবেদন করলেন, এই প্রশ্নের অবশ্য জবাব তিনি দেননি।
বিডিও (চণ্ডীতলা ২) কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা জানিয়েছেন, এখনও কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা ঢোকেনি। প্রধানের স্ত্রী তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন। বিডিও বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলায় জানানো হয়েছে।’’
পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের রজতাভ রায় বলেন, ‘‘প্রধানের স্ত্রীর নাম ক্ষতিপূরণের জন্য অনুমোদিত হয়েছে, এমন নথি আমার কাছে নেই। তবে লোকমুখে শুনছি। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী এই নিয়ে জোর প্রচার করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমপান তৃণমূল নেতাদের কাটমানি খাওয়ার বাড়তি সুযোগ করে দিয়েছে। এই নিয়ে জেলাস্তরে তদন্ত হোক।’’ বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসুর অভিযোগ, ‘‘সাধারণ মানুষ একটা ত্রিপল পাচ্ছেন না। অথচ সরকারি তহবিলের টাকা অন্যায় ভাবে পকেটে ভরছেন শাসক দলের নেতা-প্রধানরা। ওঁরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। গোটা জেলাতেই এমন ঘটেছে।’’
গোটা বিষয়টিতে বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্যাপারটা নজরে এসেছে। এমন ভুলত্রুটি কোথাও হয়ে থাকলে তা দ্রুত শুধরে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ টাকা পেয়ে থাকলে যেন ফেরৎ দিয়ে দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy