মর্মাহত: আকস্মিক এই মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়রা। নিজস্ব চিত্র
খেলাধুলো নয়। পড়াশোনাতেই ডুবে থাকত ছেলেটা। ফুটবল-ক্রিকেট খেলত খুব কম। স্বাধীনতা দিবসের ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতেই নেমেছিল ফুটবল মাঠে। আর সেই খেলাতেই অকালমৃত্যু হল ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জের ঝাঁপপুকুরের কিশোর তন্ময় সাহার।
পরিবারের লোকজনের আক্ষেপ, অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছে ছিল ছেলেটার, হল না। বাবা তারকবাবু বলেন, ‘‘ও নিয়মিত খেলাধুলো করত না। ছুটির দিনে পাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবে বলে ফুটবল প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিল। সেটাই কাল হল।’’
প্রতি বছরের মতো এ বারও স্বাধীনতা দিবসে পাড়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। রাতে ছিল খাওয়া-দাওয়া। দিনের প্রথম ম্যাচ খেলতে তন্ময়ের কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু বিকেলে দ্বিতীয় ম্যাচেই বিপত্তি। তন্ময় ডিফেন্সে খেলছিল। ম্যাচের প্রায় শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের মারা বল সে বুক দিয়ে ‘রিসিভ’ করেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। বুকে ব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সন্ধ্যায় তাকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত তন্ময়। তার মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বন্ধ হয়ে যায় ক্লাবের ‘ফিস্ট’। ছেলের মৃত্যুসংবাদ শুনে মা মুনমুনদেবী বারবার অচৈতন্য হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার তন্ময়ের সঙ্গে একই দলে খেলছিল তার পড়শি রাজেশ দত্ত। সে বলে, ‘‘বলটা উঁচু হয়ে তন্ময়ের দিকে আসতে ভেবেছিলাম ও হেড দেবে। কিন্তু দেখলাম, বুক দিয়ে আটকাতে গেল। তারপরেই শুয়ে পড়ল। কী থেকে কী হয়ে গেল!’’ তন্ময়ের জামাইবাবু বিদ্যুৎ দাসও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, ‘‘আমি মাঠের পাশে বসে খেলা দেখছিলাম। ও বল ‘রিসিভ’ করে বুকে হাত দিয়ে শুয়ে পড়তেই আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ওকে মাঠ থেকে বের করে আনি। ব্যথা বাড়ায় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও লাভ হল না।’’
স্কুলের সহপাঠী এবং শিক্ষকেরাও তন্ময়ের অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না। শুক্রবার তাঁরা তন্ময়ের বাড়িতে আসেন। প্রধান শিক্ষক মধুসূদন আচার্য বলেন, ‘‘পড়াশোনায় ছেলেটি ভালই ছিল। স্কুলে নিয়মিত খেলাধুলো করতে দেখা যেত না। কী করে এমন হল! শনিবার স্কুলে তন্ময়কে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।’’
সকালে স্কুল। বাড়ি ফিরে টিউশন নিতে যাওয়া। মূলত এই ছিল তন্ময়ের রোজনামচা। মাঝেমধ্যে শুধু পাড়ার ক্লাবে সময় কাটাতে যেত। ঝাঁপপুকুরের বাসিন্দা ননীগোপাল দে বলেন, ‘‘তন্ময়ের খেলাধুলোয় ঝোঁক ছিল না। ও ক্লাবে এলেও টিভি দেখেই সময় কাটাত। নিজে থেকে বৃহস্পতিবারই খেলতে চাইল। তাতেই সব শেষ।’’ তন্ময়ের বন্ধু বৃষ্টি মাহাতো বলে, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে তন্ময় ফোন করেছিল। বলেছিল, মাঠে নামবে। তারপরে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। সেটাই যে আমাদের শেষ কথা ভাবতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy