দাবি: শিল্পের দাবিতে সিঙ্গুরে মিছিল বাম ছাত্র-যুবদের। ছবি: দীপঙ্কর দে
দফায় দফায় বৃষ্টিতেও মিছিলের গতিরুদ্ধ হয়নি। থামেনি স্লোগান। খামতি ছিল না উৎসাহ-উদ্দীপনার।
ঘোষণামতো বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ বৃষ্টির মধ্যেই সিঙ্গুরের বুড়োশান্তি মাঠ থেকে নবান্ন অভিযান শুরু করল বাম যুব ও ছাত্রেরা। দু’দিনের এই যাত্রার প্রথম দিনে কয়েক হাজার যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী শামিল হলেন। তাঁদের হাতে-গলায় পোস্টার। পোস্টারের কোনওটিতে চাকরির দাবি, কোনওটিতে শিল্পায়নের। ছড়াতেও চাকরির দাবি দেখা গেল মিছিলের সুসজ্জিত ট্যাবলোতে।
রাজ্যে কর্মসংস্থান, নতুন শিল্প তৈরি, কাজ না-পাওয়া অবধি বেকার ভাতার ব্যবস্থা এবং কম খরচে পড়াশোনার সুযোগের দাবিতে ওই অভিযানের ডাক দিয়েছে ১২টি বামপন্থী যুব ও ছাত্র সংগঠন। উত্তরবঙ্গের শীতলকুচি থেকে নদিয়ার কৃষ্ণনগর— রাজ্যের সব জেলা থেকেই বামেদের ছাত্র-যুবরা এ দিন কমবেশি সিঙ্গুরে হাজির হন। দিনহাটা থেকে আসা বাবলু সমাদ্দার বলেন, ‘‘একটা না-হওয়া কারখানার জন্য সিঙ্গুর নিয়ে খবরের কাগজে যা লেখালিখি হয়েছে, তা বোধহয় পৃথিবীর কোথাও হয়নি। বহুদিন ধরেই তাই সিঙ্গুরে আসার ইচ্ছে ছিল।’’ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির কামরিন বানু এমএ পড়ছেন। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বলেন, ‘‘স্বপ্নকে কী ভাবে ধুলোয় মেশাতে হয় তা আমাদের সিঙ্গুরে দেখিয়েছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তাই আমরা সিঙ্গুরকেই বেছে নিয়েছি তৃণমূলের শেষের শুরুর দিন গুনতে। সিঙ্গুর বলেই অত দূর থেকেও এলাম।’’
সুসজ্জিত ট্যাবলো থেকে মাইকে স্লোগান, আর স্লোগানের তালে তালে ব্যান্ডের অনুষঙ্গ। এ দিন সবটাই ছিল একেবারে মাপা। সিঙ্গুরে দেখা গিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সভাপতি নরেন চট্টোপাধ্যায়, উত্তরপাড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ এবং স্থানীয় সিপিএম নেতা সুহৃদ দত্তকেও। কিন্তু তাঁরা কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। মিছিলের প্রস্তুতি থেকে পথচলা— সবটাই করেন ছাত্র-যুবরা। কারণ, দীর্ঘদিন পরে যুব ও ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পুরোপুরি তাদের হাতেই। নরেনবাবুরা জানান, সিঙ্গুর বলে শুধু কৌতূহলে তাঁরা এসেছেন।
এই মিছিলের জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি না-মেলায় এক রকম জঙ্গি-আন্দোলনের হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এ দিন তাঁরা সে পথে হাঁটেননি। পুলিশও কোথাও বাধা দেয়নি। বরং মিছিল যাতে সুষ্ঠু ভাবে এগোতে পারে, সে জন্য পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশকর্তারাও রাস্তায় নেমেছিলেন। সিঙ্গুর স্কুল মোড়ের কাছে মিছিলে ভিড় বাড়ে। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু নিজে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে থেকে যানবাহনের পথ করে দিতে পুলিশের কাজে তদারকি করেন। মিছিলটি সিঙ্গুরের ঘনশ্যামপুর মোড় থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। কলকাতামুখী ‘লেন’ ধরে এগোতে থাকে। সে জন্য দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পুলিশ বর্ধমানমুখী ‘লেন’ দিয়েই দু’দিকে যানবাহন যাতায়াতের ব্যবস্থা করে। দুপুর দেড়টা নাগাদ সিঙ্গুরের বড়ায় পৌঁছয় মিছিলটি। সেখানেই সাময়িক বিশ্রাম ও টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়।
এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি নবনীতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুপুরে মুড়ি-আলুর দম টিফিন করে ফের আমরা হাঁটা লাগাই ডানকুনি অভিমুখে।’’ আজ, শুক্রবার হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিলটির নবান্ন অভিমুখে যাওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy