—ফাইল চিত্র
নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে হাওড়া জেলা কৃষি দফতর গত বছর নানা পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু কোনও ভাবনাই কাজে আসেনি। ফলে এই জেলায় কৃষিজমিতে নাড়া পোড়ানো চলছেই।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, নাড়া পোড়ানোর ফলে পরিবেশে মারাত্মক দূষণ ছড়ায়। এতে রাশ টানা না গেলে হাওড়া শুধু নয়, পাশের কলকাতা শহরেও অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশের উপরে কুপ্রভাব পড়বে। বিষয়টি কৃষি আধিকারিকদের একাংশও মানছেন।
হাওড়ায় এ বার ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। অধিকাংশ জমিতে ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। ধানের শিস কেটে নেওয়ার পরে চাষিরা গাছের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে দিচ্ছেন। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে এলাকা। নাড়া পোড়ানোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় অশান্তির খবরও মিলেছে। সম্প্রতি আমতা-২ ব্লকের দু’টি জায়গায় নাড়া পোড়ানোর সময়ে মাঠের ফলন্ত ধানে আগুন লেগে যায়। বেশ কয়েক বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়। এই নিয়ে অশান্তি বাধে। ক্ষতিপূরণ আদায়ে সালিশি-সভা বসে।
আগে এই সমস্যা ছিল না। চাষিরা কাস্তে দিয়ে গোড়া থেকে ধানের গাছ কাটতেন। গোড়ায় যে সামান্য অংশ পড়ে থাকত তা পরবর্তী চাষের জন্য লাঙ্গল চষার সময়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হত। এখন যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হয়। তাতে গাছের উপরের অংশটুকুই শুধু কাটা হয়। অবশিষ্টাংশ জমিতে থাকে। সমস্যা এখানেই। জয়পুর এলাকার চাষি সৌরভ রায় বলেন, ‘‘বেশিরভাগ চাষি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটেন। বাড়তি খরচ করে নাড়া তুলে ফেলতে আগ্রহ দেখান না।’’
গত বছর জেলা কৃষি দফতরের সচেতনতা শিবিরে চাষিদের অনেকে জানিয়েছিলেন, নাড়া জমি থেকে তুলে তাঁরা অন্যত্র ফেলতে পারেন। কিন্তু এর খরচ স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বহন করতে হবে। আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘আমিও চাষি। কিন্তু, চাষিদের এই দাবি মেটানোর মতো তহবিল পঞ্চায়েতের নেই।’’ ১০০ দিনের কাজে এই খরচ অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জয়ন্ত। কিন্তু জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকরা বিষয়টি এখনও রাজ্যের গোচরে আনতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসেবে জেলার কৃষিকর্তারা জানিয়েছিলেন, ধান কাটা যন্ত্রের সঙ্গে বিশেষ একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। তাতে ধান কাটার সঙ্গেই গাছের অবশিষ্টাংশ জমির সঙ্গে রুটির মতো বেলা হয়ে যাবে। পরে সেটি তুলে নিয়ে চাষিরা কাগজকলে বিক্রি করবেন। কিন্তু, জমি থেকে কীভাবে কাগজকলে তা নিয়ে যাওয়া হবে, সেই সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সচেতনতা শিবিরের উপরেই জোর দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সচেতনতা শিবির করছে। একটি শিবিরের উদ্যোক্তা জয়িতা কুণ্ডু কুঁতি বলেন, ‘‘কৃষি দফতরকে আরও গঠনমূলক ভূমিকা নিতে হবে। শুধু শিবিরে কাজ হবে না।’’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল বলেন, ‘‘সচেতনতা শিবির হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা কথা শুনছেন না।’’ জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, করোনা আবহের জন্য অনেক কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। নাড়া পোড়ানো বন্ধে ফের তাঁরা কোমর বেঁধে নামবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy