Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

পুত্রশোক, বিদ্যুতের তার জড়িয়ে আত্মঘাতী দম্পতি

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একমাত্র ছেলে বছর পাঁচেক আগে মারা যান তড়িদাহত হয়ে। দুঃসহ সেই স্মৃতি তাড়া করত চন্দননগরের গোন্দলপাড়ার কাছারিঘাটের বাসিন্দা, সূর্য মুখোপাধ্যায় (৬৩) এবং তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবীকে (৫৬)। শনিবার ঘরের মেঝেয় দম্পতির নিথর দেহ মিলল বিদ্যুতের তার জড়ানো অবস্থাতেই। বালিশের পাশ থেকে পাওয়া গেল ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেটের তিনটি খালি স্ট্রিপ। ‘সুইসাইড নোট’-এ রয়েছে ‘পুত্রশোক’ এবং ‘আত্মহত্যা’র কথা।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে সূর্য মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী তাপসী মুখোপাধ্যায়। পাঁচ বছর আগে। — ফাইল চিত্র।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে সূর্য মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী তাপসী মুখোপাধ্যায়। পাঁচ বছর আগে। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার একমাত্র ছেলে বছর পাঁচেক আগে মারা যান তড়িদাহত হয়ে। দুঃসহ সেই স্মৃতি তাড়া করত চন্দননগরের গোন্দলপাড়ার কাছারিঘাটের বাসিন্দা, সূর্য মুখোপাধ্যায় (৬৩) এবং তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবীকে (৫৬)। শনিবার ঘরের মেঝেয় দম্পতির নিথর দেহ মিলল বিদ্যুতের তার জড়ানো অবস্থাতেই। বালিশের পাশ থেকে পাওয়া গেল ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেটের তিনটি খালি স্ট্রিপ। ‘সুইসাইড নোট’-এ রয়েছে ‘পুত্রশোক’ এবং ‘আত্মহত্যা’র কথা।

হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘পুত্রশোকে ওই দম্পতি আত্মঘাতী হন। আমাদের অনুমান, ঘুমের ওষুধ খেয়ে, পরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ওঁরা। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।’’

ছেলের স্মৃতিরক্ষায় নিজেদের সঞ্চয়ের অনেকটাই একটি স্কুলকে দান করে দিয়েছিলেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি। বসতবাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন সেবা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য। এ দিন তাঁদের আত্মহত্যার খবর জেনে স্তম্ভিত হয়ে যান পড়শি-পরিচিতেরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের প্রাক্তন কর্মী সূর্যবাবুও ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ছেলে সৌরভ কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকতেন। ২০০৯-এর ১০ ডিসেম্বর সকালে স্নান করার জন্য বৈদ্যুতিক হিটারে তিনি জল গরম করছিলেন। অসাবধানে সেই জলে হাত দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যান। ছেলের অকালমৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সূর্যবাবু এবং তাপসীদেবী।

২০১৩ সালে অবসর নেন সূর্যবাবু। ছেলের স্মৃতিরক্ষায় এলাকায় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন দম্পতি। সেইমতো স্থানীয় অরবিন্দ বিদ্যালয়কে শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য ৩০ লক্ষ টাকা দান করেন। নিজেদের দোতলা বাড়িটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে দেন সেবা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য। বছরখানেক আগে সৌরভের নামে সেই সেবা প্রতিষ্ঠান চালুও হয়ে যায়। সূর্যবাবুরা চন্দননগরের বড়বাজার এলাকায় এক বন্ধুর ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।

পড়শিরা জানান, ঘনঘন নিজেদের পুরনো বাড়িতে চলে যেতেন সূর্যবাবুরা। সেখানে সৌরভের প্রচুর ছবি রয়েছে। সেই সব ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। পড়শিদের সঙ্গে কথাবার্তাতেও অনিবার্য ভাবে এসে পড়ত সৌরভের প্রসঙ্গ। আসত হা-হুতাশ। মাস ছয়েক ধরে পুরনো বাড়িরই দোতলায় থাকছিলেন মুখোপাধ্যায়-দম্পতি।

এ দিন সকালে পরিচারিকা ঘরে ঢুকে সূর্যবাবুদের বিদ্যুতের তার জড়ানো অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে ওঠেন। ঘটনা জানাজানি হয়। পুলিশ আসে। ঘটনাস্থলে যাওয়া চন্দননগরের বিদায়ী মেয়র রাম চক্রবর্তীর স্মৃতিচারণ, ‘‘বছরখানেক আগে ছেলের স্মৃতিরক্ষায় কিছু করার জন্য সাহায্য চাইতে সূর্যবাবু আমার কাছে এসেছিলেন। তখনও বারবার ছেলের কথাই বলছিলেন।’’ দম্পতির মৃত্যু-সংবাদ শুনে ভেঙে পড়েন অরবিন্দ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কস্তুরী রায়। বলেন, ‘‘ওঁদের দানের কথা ভুলতে পারব না।’’ তিনি জানান, কাল, সোমবার সূর্যবাবুদের স্মৃতিতে স্কুলে ছুটি দেওয়া হবে।

পড়শি হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলের শোক সামলে উঠতে পারেননি ওঁরা। সৌরভ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চলে গিয়েছিল। সূর্যবাবুরাও বিদ্যুতের তারই বাছলেন!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy