একশো দিনের কাজে এই মাটি কাটার কাজই বন্ধ করে দেওয়া হল। —ফাইল চিত্র
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ শোনা গিয়েছে। এ বার সেই কাজই বাতিল করে দেওয়া হল। তার বদলে ওই প্রকল্পে জোর দেওয়া হয়েছে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হয়, এমন কাজে। প্রকল্পের এই নিয়ম বদলে বহু পঞ্চায়েতের কর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকদিন আগেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ওই প্রকল্পের নিয়ম বদল সংক্রান্ত নির্দেশ পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠিয়ে দেয়। তাতে বলা হয়েছে— ব্যক্তিগত পুকুর সংস্কার, জমিতে মাটি ফেলা বা মাটি কাটা, সেচ খাল থেকে পলি ও মাটি তোলা, সেচ খালের বাঁধ উঁচু করা, অন্যান্য খাল থেকে মাটি তুলে অন্যত্র ফেলা, নদী থেকে বালি-মাটি তোলা, মাটি ফেলে রাস্তা উঁচু করা, রাস্তায় মোরাম ফেলার মতো কাজগুলি আর করা যাবে না। তার বদলে ঢালাই রাস্তা তৈরি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি, বাংলা আবাস যোজনায় বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ, নদীবাঁধ ঢালাইয়ের কাজ করা যাবে। তাতে স্থায়ী সম্পদ তৈরি হবে। জোর দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত বনসৃজনের উপরে। কোনও ব্যক্তি যদি গাছের চারা লাগান, তা হলে সেই চারার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওই ব্যক্তি একশো দিনের প্রকল্প থেকে মজুরি বাবদ টাকা পাবেন।
কিন্তু কেন এই বদল?
পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, ১০০ দিনের কাজ দেশে শুরু হয় ২০০৫ সাল থেকে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, গ্রামের যে সব খেতমজুর সারা বছর কাজ পান না, তাঁদের বছরে অন্তত ১০০ দিন কাজ দেওয়া। ক্রমশ দেখা গেল, মজুরি দেওয়ার নাম করে বহু জায়গায় কার্যত খয়রাতি ও লুট চলছে এবং সেটি হচ্ছে মূলত খাল সংস্কার, পুকুর সংস্কার, রাস্তায় মাটি ফেলার মতো কাজে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এ বারে কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে, প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা আনতে।
ফাঁকি দেওয়া যায় এমন কাজ ধীরে ধীরে বন্ধ করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা শুধুমাত্র মাটি কাটার নাম করে জলে যাক, কেন্দ্র আর তা চাইছে না। সেই কারণে স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ ভাবে নিয়েছে।
নতুন নির্দেশিকায় যে কাজগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে সেগুলি মূলত শ্রমনিবিড় ছিল। পঞ্চায়েতগুলি তাদের বাজেটে এইসব কাজে বেশি টাকা বরাদ্দ করত। পঞ্চায়েতগুলি ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য যে বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করেছে, তাতে একশো দিনের কাজে মাটি কাটা, পুকুর সংস্কার, খাল সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা আর হবে না। নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। এতেই পঞ্চায়েতগুলি ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কর্তাদের দাবি, শ্রমনিবিড় কাজ বাদ দেওয়ার ফলে তাঁরা বেশিরভাগ জবকার্ডধারীকে কাজ দিতে পারবেন না। শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে নতুন নির্দেশিকা।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর নতুন নির্দেশিকার জেরে কিছু প্রাথমিক অসুবিধার কথা মেনেও নিয়েছে। তবে দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে কয়েকটি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে। মাসকয়েক আগে হুগলি, বর্ধমান প্রভৃতি জেলায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিনিধিরা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের কিছু নমুনা দেখতে যান। তাঁরা দেখেন, খাল সংস্কার, ব্যক্তিগত পুকুর সংস্কার, রাস্তায় মাটি
ফেলার মতো কাজে বিস্তর ফাঁকি আছে। অনেক জায়গায় আদৌ কাজটি হয়নি, অথচ মজুরির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy