Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
education

স্মার্ট ক্লাসরুমেও পড়ুয়া নামেই

যে সব কারণে এ বার দিল্লিতে আপ ফের ক্ষমতায় এল বলে ধরা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম সরকারি স্কুলের নজরকাড়া উন্নয়ন। এ রাজ্যে পুরভোট আসন্ন। পরের বছর বিধানসভা ভোট। এই আবহে দুই জেলার সরকারি স্কুলগুলির কী অবস্থা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ বাগনানের টেঁপুর নবাসন অনন্তরাম হাইস্কুল২০০০ সালের গোড়া পর্যন্ত যে স্কুলে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী ছিল, এখন সেখানে সংখ্যাটা মেরেকেটে শ’পাঁচেক। চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে মাত্র ৩৬ জন। কেন এই অবস্থা?

সঙ্কট: গুটিকতক পড়ুয়াকে নিয়েই চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

সঙ্কট: গুটিকতক পড়ুয়াকে নিয়েই চলছে ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১২
Share: Save:

স্কুলে স্মার্ট ক্লাসরুম আছে। খেলার মাঠ আছে। বিজ্ঞান-ভূগোলের ল্যাবরেটরি রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাও কম নেই। কিন্তু পডু়য়া কই?

গ্রামে গ্রামে গিয়ে অভিভাবকদের ছেলেমেয়েকে বাগনানের টেঁপুর নবাসন অনন্তরাম হাইস্কুলে পাঠাতে অনুরোধ করছেন সেখানকারর শিক্ষকেরা!

২০০০ সালের গোড়া পর্যন্ত যে স্কুলে প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী ছিল, এখন সেখানে সংখ্যাটা মেরেকেটে শ’পাঁচেক। চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে মাত্র ৩৬ জন। কেন এই অবস্থা?

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অবস্থার জন্য দায়ী মুম্বই রোডের সম্প্রসারণ। স্কুলের সামনে দিয়ে গিয়েছে ওই জাতীয় সড়ক। ২০০৪ সালে সড়কটি সম্প্রসারিত হওয়ায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। রাস্তা পার হয়ে যে সব ছাত্র আসত, তাদের অভিভাবকরা এই রাস্তাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে মনে করতে থাকেন। ফলে, তাঁরা অন্য স্কুলে ছাত্র ভর্তি করাতে শুরু করেন।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোক মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলের সামনে মুম্বই রোডে একটি ‘কাট’ করে সেখানে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েনের জন্য আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ-সহ বিভিন্ন মহলে আবেদন করেছি। কোনও কাজ হয়নি। এখানে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হলে অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেদের এখানে হয়ত পাঠাতেন।’’ গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হলে জাতীয় সড়ক সংস্থার অনুমতি দরকার। জাতীয় সড়ক সংস্থার বক্তব্য, প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখা হবে।

কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভিভাবকদের একটা বড় অংশ অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের অভিযোগ, শুধু জাতীয় সড়ক সংস্থা বা অন্য স্কুলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। একটা সময়ে এই স্কুলের সুনাম ছিল শৃঙ্খলা এবং ভাল শিক্ষকের জন্য। ভাল শিক্ষকেরা অবসর নিয়েছেন। স্কুলে এখন শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। ছাত্রছাত্রীরা কখন আসছে, কখন যাচ্ছে—হদিস রাখেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। পতনটা তো আর একদিনে হয়নি।

বিকাশ গুড়িয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘এই স্কুলের সঙ্গে আমার পূর্বপূরুষের স্মৃতি জড়িত। তাই ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আমার মনে হয়, যে ক’জন ছাত্রছাত্রী আছে, তাদের যদি ভাল করে পড়ানো হয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে যদি তারা ভাল ফল করে, তা হলেই এই স্কুল আবার আগের সুনাম ফিরে পাবে।’’ একই মত ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তথা পাঁচলার একটি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর খাঁড়ার। তিনি বলেন, ‘‘দশ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে এখানে পড়তে আসতাম। এখনকার অবস্থা দেখলে খুব খারাপ লাগে।’’

জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসের এক কর্তা জানান, বহুবার ওই স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। না হলে শিক্ষকদের উদ্বৃত্ত ঘোষণা করা হবে। ২০১৮ সাল থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আগে যা হওয়ার হয়েছে, এখন পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন। সাধ্যমতো পরিকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমরা হাতজোড় করে অভিভাবকদের ছাত্র পাঠাতে বলছি। ছাত্রের অভাবে আমরা পড়াতে পারছি না। আমাদের কষ্ট হচ্ছে।’’

স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪১ সালে। এলাকার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্যই মূলত টেঁপুর গ্রামের বাসিন্দা অনন্তরাম রায় এবং যোগেন্দ্রনাথ রায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম থেকেই ওই স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি চালু হয়। তার আগেই ১৮৫৪ সালে তৈরি হয়ে গিয়েছিল বাগনান হাইস্কুল। তূলনায় অনেক নবীন হলেও টেঁপুর নবাসন অনন্তরাম হাইস্কুল বাগনান হাইস্কুলের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিত। বাগনানের ১০-১২টি গ্রামের পড়ুয়ারা ভাগাভাগি করে দু’টি স্কুলে ভর্তি হত। পঠন-পাঠন নিয়ে দু’টি স্কুলের মধ্যে চলত প্রতিযোগিতা। বাগনান স্টেশন রোডে চায়ের দোকানে তুফান উঠত দু’টি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে।

২০১২ সালে স্কুলের কিছু নামী শিক্ষক অবসর নেন। তারপর থেকেই টেঁপুর নবাসন অনন্তরাম হাইস্কুলে পড়ুয়া কমতে থাকে। আশপাশের স্কুলগুলি এখন ছাত্রছাত্রীতে গমগম করছে। আর ওই স্কুল ছাত্রাভাবে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Government Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy