Advertisement
০৫ জানুয়ারি ২০২৫

শুধু পুলিশ বদলে কি হবে, তৃণমূল নেতা খুনে প্রশ্ন চুঁচুড়ায়

নড়বড়ে পরিকাঠামোর কারণেই চুঁচুড়ায় দুষ্কর্মে লাগাম পড়ানো যাচ্ছে না বলে পুলিশ মহলেরই একাংশের অভিমত। তার উপরে পুলিশের উপরে শাসক দলের নেতাদের প্রভাব! ফলে পুলিশ কমিশনারকে বদলি করলেই আইন-শৃঙ্খলার ছবি আদৌ বদলাবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে হুগলির জেলা সদরে। সরব বিরোধীরাও।

দিলীপ রাম। নিহত তৃণমূল নেতা।

দিলীপ রাম। নিহত তৃণমূল নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

রাজা, উজির আছেন। নেই সেপাই!

নড়বড়ে পরিকাঠামোর কারণেই চুঁচুড়ায় দুষ্কর্মে লাগাম পড়ানো যাচ্ছে না বলে পুলিশ মহলেরই একাংশের অভিমত। তার উপরে পুলিশের উপরে শাসক দলের নেতাদের প্রভাব! ফলে পুলিশ কমিশনারকে বদলি করলেই আইন-শৃঙ্খলার ছবি আদৌ বদলাবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে হুগলির জেলা সদরে। সরব বিরোধীরাও।

গত শনিবার সকালে ব্যান্ডেল স্টেশনে তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের ঘটনার জেরে প্রথমে চুঁচুড়া থানার আইসি এবং ব্যান্ডেল ফাঁড়ির ইনচার্জকে বদলি করা হয়। তার পরে সরানো হয় সিপি অখিলেশ চতুর্বেদীকেও।

দু’বছর আগে হুগলি পুলিশকে ভেঙে শিল্পাঞ্চলের সাতটি থানা নিয়ে চন্দননগর কমিশনারেট গঠন করা হয়। বাকি ১৬টি থানা গ্রামীণ পুলিশের আওতাধীন। বেশি থানা থাকায় গ্রামীণ এলাকায় বেশি পুলিশকর্মী দেওয়া হয়। কমিশনারেটে বিভিন্ন পদে আধিকারিক নিয়োগ হলেও থানাস্তরে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী জোটেনি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে, চুঁচুড়া থানা এলাকায় সাতটি ফাঁড়ির মধ্যে ছ’টিই বন্ধ। একমাত্র ব্যান্ডেল ফাঁড়ি চলছে। ফাঁড়িতে চুরি আটকাতে সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে পাহারা দিতে হয়। সমস্যার কথা মানছেন
সংশ্লিষ্ট সকলেই।

চুঁচুড়া, হুগলি, ব্যান্ডেল, চন্দননগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নতুন নয়। গত বছর তিনেক ধরে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হয়েছে। এক সময় চুঁচুড়ার চেনা দুষ্কৃতীরা শাসকদলের দাদাদের নিরাপদ আশ্রয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে রবীন্দ্রনগর এলাকায়। পুলিশ তাদের ধরে জেলে ভরেছে। চন্দননগরের কাশী, চুঁচুড়ার বিশালের মতো দুষ্কৃতীরা গারদের পিছনে থাকায় অপরাধ কমলেও পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, জেল থেকে দাগী দুষ্কৃতীরা কলকাঠি নাড়ে। ‘অপারেশন’ চালায় তাদের অল্পবয়স্ক সাগরেদরা। কিন্তু অনেকে পুলিশকর্মী এদের চেনেনই না। অথচ এদের হাতেও অস্ত্র থাকে। অচেনা, অনামী এই দুষ্কৃতীরাই পুলিশের মাথাব্যাথার কারণ। দুষ্কর্ম ঘটিয়ে তারা উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি, জগদ্দল, ভাটপাড়া নদিয়ার কুপার্স ক্যাম্পে চলে যায়। সেখানে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিশে অপরাধ করে। দুর্বল ‘সোর্স ইনফরমেশন’ নিয়ে পুলিশের পক্ষে তাদের ধরা সম্ভব হয় না। একই ভাবে হুগলিতেও বহিরাগত দুষ্কৃতীদের আনাগোনা চলে।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণে অন্তরায় বলে পুলিশের একাংশের দাবি। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘এলাকায় অপরাধ হলে নেতারা বেশি সরব হন। আবার আসামি ধরে লকআপে ঢোকানোর আগেই নেতার ফোন আসে। অমুককে ধরলেন কেন? ও ভাল ছেলে। আমাদের সক্রিয় কর্মী। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কোথায় যাবে? অপরাধী ধরেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।’’

বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘শুধু পুলিশকে দুষে কী লাভ? চুঁচুড়ায় শাসকদলের বড় দুই নেতা স্বমহিমায় থাকলে পুলিশ কী করবে? কাজ করতে দিলে তো? তাঁদের চেলা কাউন্সিলরদের আস্ফালনও সীমাহীন। যে নেতার খুন নিয়ে এত হইচই, তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দলবলকে জেলে ঢোকানোতেই ওদের বিবাদ। নেতারা সব জানেন। তাদের কলকাঠিতেই সব হচ্ছে।’’ পুলিশে রদবদল করে প্রশাসন সমস্যার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে চাইছে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ।

শাসকদলের নেতাদের মুখে অবশ্য কুলুপ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। শাসক দল দুষ্কৃতীদের প্রশয় দেয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bandel Murder TMC Dilip Ram Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy