Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নিকাশি বেহাল, ডানকুনি শহরের দুর্বিষহ জল-ছবি, হাঁটু জল পেরিয়ে বছরভর যাতায়াত

প্রত্যন্ত গ্রাম নয়। এই ছবি কলকাতার কাছেই হুগলির ডানকুনি শহরের সারদাপল্লি এলাকার। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, বছর তিন-চার ধরে নিকাশি বেহাল হওয়ার জন্যই এই হাল।

দুর্দশা: বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত। ছবি: দীপঙ্কর দে

দুর্দশা: বাঁশের সাঁকো বানিয়ে যাতায়াত। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রকাশ পাল
ডানকুনি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪১
Share: Save:

রাস্তা হারিয়ে গিয়েছে জলের তলায়। কালো নোংরা সেই জল পেরিয়েই চলে যাতায়াত। কিলবিল করে সাপ।

প্রত্যন্ত গ্রাম নয়। এই ছবি কলকাতার কাছেই হুগলির ডানকুনি শহরের সারদাপল্লি এলাকার। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, বছর তিন-চার ধরে নিকাশি বেহাল হওয়ার জন্যই এই হাল। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নিকাশি জলের ঠিকানা এই এলাকা। ফেব্রুয়ারি থেকে জল নামেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভা থেকে শুরু করে ‘দিদিকে বলো’তে দুর্দশার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি।

পুরপ্রধান হাসিনা শবনমের বক্তব্য, ‘‘ওটা নিচু জায়গা। জল বেরনোর জায়গা নেই। তাও পাম্প লাগিয়ে যতটা সম্ভব জল বের করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘হাওড়া-হুগলির সীমানা থেকে চণ্ডীতলা পর্যন্ত অহল্যাবাই রোড সম্প্রসারণ হবে। তখন রাস্তার মাঝে দু’টো কালভার্ট করা হবে। সেখান দিয়ে সারদাপল্লির জল সরস্বতী নদীতে গিয়ে পড়বে। তাতে সমস্যা অনেকটা মিটবে। আগামী বর্ষার আগেই ওই কাজ হয়ে যাবে।’’

ডানকুনি স্টেশনের অদূরেই পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সারদাপল্লি। পাড়ার দুর্গামণ্ডপের পর থেকেই দুর্বিসহ জলছবি। কিছুটা এগোতে গোড়ালিডোবা জ‌লে পৌঁছে যায় হাঁটুর কাছে। চারপাশ কচুরিপানায় ঢাকা। ছবি তুলতে দেখে গৃহবধূ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘কয়েক দিন আগেও কোমর ডোবা জল ছিল, তখন আসেননি কেন!’’ মুজিবর রহমান মোল্লার বাড়িতে যাওয়ার উপায়, কচুরিপানার জঙ্গলে ঢাকা জলার মাঝে বস্তায় রেললাইনের পাথর ভরে তৈরি রাস্তা। পাশের বাড়িতে যেতে ভরসা স্যাঁতস্যাতে বাঁশের মাচা। বাড়ি তৈরি সরকারি প্রকল্পে। কিন্তু রাস্তা নেই! এমন নড়বড়ে মাচা অবশ্য আরও আছে। মুজিবরের গলায় হতাশা, ‘‘আমারা যেন মানুষ নই!’’ মেহরুন্নিসা বেগমের কথায়, ‘‘ঘরেও জল থাকে। সাপ ঘুরে বেড়ায়। পুরসভা ব্যবস্থা ‌নেয় না।’’

গৃহবধূ মিনা প্রসাদ বলেন, ‘‘পচা জলে পায়ে ঘা হয়। মেয়ে অনুশ্রী প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওকে কোলে করে বের করি।’’ শুক্রবার স্থানীয় এক যুবকের বিয়ে হয়। পল্লির জলে ডোবা রাস্তাই নববধূকে স্বাগত জানিয়েছে। এগারো বছরের ঋজু বণিকের আক্ষেপ, জলের জন্য পাড়ায় ক্রিকেটের পাঠ উঠে গিয়েছে। একরত্তি বোনকে কোলে নিয়ে সন্তর্পণে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এসে চতুর্থ শ্রেণির পারভিন খাতুন জানায়, রাতে টিউশন সেরে ফিরতে ভয় লাগে। গত এক মাসে সে বাড়ির আশপাশে অন্তত ২৫টি সাপ দেখেছে। তার কথায়, ‘‘রাস্তায় সাপ থাকলে জলে ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ করি, যাতে সাপ চলে যায়।’’ অনেকেরই বাড়িতেও সাপ ঢুকে যায়। চতুর্দিকে মশারও আস্তানা। ডেঙ্গির ভরা মরসুমে ঘরে ঘরে জ্বর।

প্রৌঢ় সুজিৎ দাস স্ত্রী নমিতাকে নিয়ে সম্প্রতি দু’রাত কাটান ডানকু‌নি স্টেশনে। কেননা, জলে ডোবা ঘরে ঢোকার জো ছিল না। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘চৌকির উপরেই আমাদের সংসার চলে। দু’দিন জল সরেছে।’’ বীথিকা পাল আর্থারাইটিসে ভুগছেন। ভাল ভাবে হাঁটতে পারেন না। এই রাস্তা ভেঙে তিনি ডাক্তারের কাছে যেতে পারছেন না। দিন কুড়ি আগে নাহার বেগম মণ্ডলকে সাপে ছোবল দিয়েছিল। সাপের নাগাল এড়াতে তাঁর পায়ে উঠেছে গামবুট। এলাকাবাসীর আক্ষেপ, তাঁরা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। বাড়িতে বিদ্যুতের সমস্যায় মিস্ত্রি আসতে চান না। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পাড়ার মোড় থেকে নিজেদেরই বয়ে আনতে হয়। ছোটদের পড়াশোনা শিকেয় ওঠার জোগাড়। গৃহশিক্ষক বাড়িতে আসতে চান না।

এক যুবতী বলেন, ‘‘হাঁটুর উপরে জল জমে থাকে। ব্যাগে একটা পোশাক নিয়ে বেরোতে হয়। দুর্গামন্দিরের সামনে একটা বাড়িতে সেই পোশাক বদলানো হয়। আমাদের সম্ভ্রম নেই! এ ভাবেই কি চলবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dankuni Sewerage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy